A concise information of Dainak, Tongchangya/Tanchangya history

Best Thayet.jpg

(1) Tagaung Kingdom, Thayet, and Pyay. (2) Tayet (Earlier name was Micchagiri)

1. First Sakyan group arrived in Northern Myanmar at 850 BCE in Tagaung (Myanmar) from central India as Sakya. ( U Pe Maung Tin & G.C Luce, The Glass Palace of the Kings of Myanmar, Yangon: Unity Publication. 2008: 1. (http://www.shanyoma.org/yoma/the-glass-palace-chronicles.pdf)

2. Second Sakyan group arrived in Northern Myanmar called Tagaung around 6th Century BCE as Sakya from Northern India). (Ibid. 3)

3. Due to Chinese attack in 600 BCE the Sakyan moved from Tagaung to Micchagiri (Present Thayet, Magwe, Myanmar) at the bank of Iravati (Ayyawaddy River) from Tagaung. (Ibid:, 309)

4. In 443 BCE Sakyan founded Prome (Present Pye, Bago, Myanmar) (G. E. Harvey, History of Burma, London: Longmans Green and Co, 1926: 307)

5. In 1333-34 CE Arakan king defeated the (Thek) Sakyan king at Micchagiri (present Thayet, Magwe, Myanmar) and took them to Arakan, Western Myanmar and our Sakyan (Thek) become Dainak ( Myanmar Min Aredawbung, Danyawaddy Aredaw Bung: 14)

6. From Arakan or Sa Prye( Pye) around 1364 (it is an estimate date) CE (Common Era) went to the border of Burma and Bangladesh called Toin Gang as Dainak. (Heard from our ancestor)

Prome.gif

7. From Toin River Pha Phru led 4000 Dainak with him to Chittagong Hill Tract during Dharam Bux Khan ( Chakma King) and gave them as Toin- Gangya since they went from Toin River ( a tributary of Matamuri), in Burma-Bangladesh border. The king did not list them as Chakma but took care them as his subjects. ( Biro Kumar Tanchangya, Tanchangya Parichiti (Bandarban: Tanchangya Maha Sommilon, 1995: 21)

bandarban-map

8. The  name of “Toin-Gangya” to Tounjynyas has changed during British India in 19th Century CE. (Lewin, Thomas Herbert, The Hill Tracts of Chittagong and the Dwellers Therein: with comparative vocabularies of the Hill Dialects, Calcutta: Bengal Printing Company Limited, 1869: 62.(https://ia800205.us.archive.org/15/items/cu31924023625936/cu31924023625936.pdf)

9. In 1989, Bangladesh government identified Tanchangya as one of the indigenous communities in Bangladesh. (Rupayan Dewan; Jhum, Dhaka University)

10. Tounjynyas to Tanchangya/ Tongchangya.

Sakya> Dainak> Toin-Gangya> Tounjynyas> Tanchangya/ Tongchangya.

This is the brief history Tanchangya from Sakya to Tanchangya/Tongchangya. We trace this history as our due to our Dainak who has been living in Myanmar since immemorial time. Hope all of you will find interesting. If you find interesting share with others.

“আ” উপসর্গযোগে গঠিত ১০০+ তঞ্চঙ্গ্যা শব্দ।

tongchn1
লেখকঃ চন্দ্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা
# মূল শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশক শব্দসমূহ:
 
১.আউচ্ছ্যা-অনুত্থিত [আ+উচ্ছ্যা]
২.আকাচায়্যা-অপরিষ্কৃত [আ+কাচায়্যা]
৩.আকাইন্ন্যা-অক্রন্দিত [আ+কাইন্ন্যা]
৪.আকাপ্প্যা-অকর্তিত [আ+কাপ্প্যা]
৫.আকাবা-অকর্তিত [আ+কাবা]
৬.আকামাজ্জ্যা-কামড়ানো হয়নি এমন [আ+কামাজ্জ্যা]
৭.আকিচ্চ্যা-মাজা হয়নি এমন [আ+কিচ্চ্যা]
৮.আকিন্ন্যা-অক্রীত [আ+কিন্ন্যা]
৯.আকুইচ্চ্যা-অরোপিত [আ+কুইচ্চ্যা]
১০.আকুবায়্যা-পোতা হয়নি এমন [আ+কুবায়্যা]
১১.আকুয়্যা-অকথিত [আ+কুয়্যা]
১২.আখঁআয়্যা-বের করা হয়নি এমন [আ+খঁআয়্যা]
১৩.আখচরায়্যা-হাতড়ানো হয়নি এমন [আ+খচরায়্যা]
১৪.আখচাজ্যা-হাতড়ানো হয়নি এমন [আ+খচাজ্যা]
১৫.আখাইচ্চ্যা-অমুদিত [আ+খাইচ্চ্যা]
১৬.আখায়্যা-অভুক্ত [আ+খায়্যা]
১৭.আখিলায়্যা-খিলানো হয়নি এমন [আ+খিলায়্যা]
১৮.আখিল্যা-খিলানো হয়নি এমন [আ+খিল্যা]
১৯.আগনা-অগনিত [আ+গনা]
২০.আগাইচ্ছ্যা-অস্নাত [আ+গাইচ্ছ্যা]
২১.আগাধায়্যা-স্নান করানো হয়নি এমন [আ+গাধায়্যা]
২২.আগায়্যা-অগীত [আ+গায়্যা]
২৩.আগারায়্যা-পোতা হয়নি এমন [আ+গারায়্যা]
২৪.আগিয়ায়্যা-যার উপর দিয়ে যাওয়া হয়নি [আ+গিয়ায়্যা]
২৫.আগিল্যা-গেলা হয়নি এমন [আ+গিল্যা]
২৬.আগুইচ্ছ্যা-অগৃহীত [আ+গুইচ্ছ্যা]
২৭.আগুজ্যা-অকৃত [আ+গুজ্যা]
২৮.আগুন্যা-অগনিত [আ+গুন্যা]
২৯.আগুল্যা-গলেনি এমন [আ+গুল্যা]
৩০.আগেচায়্যা-যা অঙ্কুরিত নয় [আ+গেচায়্যা]
৩১.আঘাইচ্যা-ঘাঁটা হয়নি এমন [আ+ঘাইচ্যা]
৩২.আঘিজ্যা-ঘেরা হয়নি এমন [আ+ঘিজ্যা]
৩৩.আঘুজ্যা-ঘোরা হয়নি এমন [আ+ঘুজ্যা]
৩৪.আচাবায়্যা-চিবানো হয়নি এমন [আ+চাবায়্যা]
৩৫.আচায়্যা-অদর্শিত [আ+চায়্যা]
৩৬.আচালায়্যা-অচালিত [আ+চালায়্যা]
৩৭.আচিমায়্যা-ওজন বা ফোলা কমেনি এমন [আ+চিমায়্যা]
৩৮.আচুক্ক্যা-অশোষিত [আ+চুক্ক্যা]
৩৯.আছাক্ক্যা-ছাঁকা হয়নি এমন [আ+ছাক্ক্যা]
৪০.আছায়্যা-অনাচ্ছাদিত [আ+ছায়্যা]
৪১.আছিনা-অছিন্ন [আ+ছিনা]
৪২.আছিন্যা-অছিন্ন [আ+ছিন্যা]
৪৩.আছুল্যা-আবরণ তোলা হয়নি এমন [আ+ছুল্যা]
৪৪.আজরায়্যা-জোড়া দেওয়া হয়নি এমন [আ+জরায়্যা]
৪৫.আজাক্ক্যা-অজাগ্রত [আ+জাক্ক্যা]
৪৬.আজায়্যা-জাগানো হয়নি এমন [আ+জায়্যা]
৪৭.আজায়্যা-অগমিত [আ+জায়্যা]
৪৮.আজিক্ক্যা-অজ্যান্ত [আ+জিক্ক্যা]
৪৯.আটাঁয়্যা-টাঙানো হয়নি এমন [আ+টাঁয়্যা]
৫০.আটিক্ক্যা-টিকেনি এমন [আ+টিক্ক্যা]
৫১.আঠিল্যা-ঠেলা হয়নি এমন [আ+ঠিল্যা]
৫২.আডাক্ক্যা-ডাকা হয়নি এমন [আ+ডাক্ক্যা]
৫৩.আডূজ্যা-শব্দ করেনি এমন [আ+ডূজ্যা]
৫৪.আঢাক্ক্যা-ঢাকা হয়নি এমন [আ+ঢাক্ক্যা]
৫৫.আতআয়্যা-খোঁজা হয়নি এমন [আ+তআয়্যা]
৫৬.আতাক্ক্যা-তাক করা হয়নি এমন [আ+তাক্ক্যা]
৫৭.আতুল্যা-তোলা হয়নি এমন [আ+তুল্যা]
৫৮.আদিক্খ্যা-অদর্শিত [আ+দিক্খ্যা]
৫৯.আদিয়্যা-অপ্রদত্ত [আ+দিয়্যা]
৬০.আদুক্ক্যা-পিষে ফেলা হয়নি এমন [আ+দুক্ক্যা]
৬১.আদুমুজ্যা-দৌঁড়ানো হয়নি এমন [আ+দুমুজ্যা]
৬২.আদুল্যা-পিষা হয়নি এমন [আ+দুল্যা]
৬৩.আঘুইচ্চ্যা-অঘর্ষিত [আ+ঘুইচ্চ্যা]
৬৪.আদেহায়্যা-অপ্রদর্শিত [আ+দেহায়্যা]
৬৫.আধারায়্যা-ধার দেওয়া হয়নি এমন [আ+ধারায়্যা]
৬৬.আধুজ্জ্যা-অধৃত [আ+ধুজ্যা]
৬৭.আধুয়্যা-অধৌত [আ+ধুয়্যা]
৬৮.আধুল্যা-দোলা হয়নি এমন [আ+ধুল্যা]
৬৯.আনাচ্চ্যা-নাচা হয়নি এমন [আ+নাচ্চ্যা]
৭০.আনিক্ক্যা-বের হয়নি এমন [আ+নিক্ক্যা]
৭১.আনিচায়্যা-নেওয়া হয়নি এমন [আ+নিচায়্যা]
৭২.আপরা-লেখাপড়া করেনি এমন [আ+পরা]
৭৩.আপিক্ক্যা-পান করা হয়নি এমন [আ+পিক্ক্যা]
৭৪.আপিন্যা-পরিধান করা হয়নি এমন [আ+পিন্যা]
৭৫.আপুইজ্যা-পোড়া হয়নি এমন [আ+পুইজ্যা]
৭৬.আপুইজ্ঝ্যা-অপঠিত [আ+পুইজ্ঝ্যা]
৭৭.আপুরা-অপূর্ণ [আ+পুরা]
৭৮.আফিল্যা-ফেলা হয়নি এমন [আ+ফিল্যা]
৭৯.আফুলায়্যা-ফোলানো হয়নি এমন [আ+ফুলায়্যা]
৮০.আফেলায়্যা-ফেলানো হয়নি এমন [আ+ফেলায়্যা]
৮১.আবলায়্যা-অনিমন্ত্রিত [আ+বলায়্যা]
৮২.আবাইচ্চ্যা-অস্পর্শিত [আ+বাইচ্চ্যা]
৮৩.আবাইচ্ছ্যা-অবাছাইকৃত [আ+বাইচ্ছ্যা]
৮৪.আবাইজ্যা-বাড়েনি এমন [আ+বাইজ্যা]
৮৫.আবাইজ্জায়্যা-মারা বা আঘাত করা হয়নি এমন [আ+বাইজ্জায়্যা]
৮৬.আবাইজ্ঝ্যা-বাড়া হয়নি এমন [আ+বাইজ্ঝ্যা]
৮৭.আবাইন্যা-বাঁধা হয়নি এমন [আ+বাইন্যা]
৮৮.আবিচাজ্জ্যা-হাতড়ানো হয়নি এমন [আ+বিচাজ্জ্যা]
৮৯.আবিচিরায়্যা-হাতড়ানো হয়নি এমন [আ+বিচিরায়্যা]
৯০.আবিচ্চ্যা-অবিক্রীত [আ+বিচ্চ্যা]
৯১.আবিলায়্যা-বিলানো হয়নি এমন [আ+বিলায়্যা]
৯২.আবুন্যা-বোনা হয়নি এমন [আ+বুন্যা]
৯৩.আবেরায়্যা-বেড়ানো বা ভ্রমণ করা হয়নি এমন। [আ+বেরায়্যা]
৯৪.আভরা-অভর্তি [আ+ভরা]
৯৫.আভরায়্যা-অভর্তিকৃত [আ+ভরায়্যা]
৯৬.আভুজ্যা-ভরেনি এমন [আ+ভুজ্যা]
৯৭.আমরায়্যা-মরানো হয়নি এমন [আ+মরায়্যা]
৯৮.আমাচ্চ্যা-মাজা হয়নি এমন [আ+মাচ্চ্যা]
৯৯.আমাজ্জ্যা-মাড়াই করা হয়নি এমন [আ+মাজ্জ্যা]
১০০.আমাডায়্যা-ডাকা হয়নি এমন [আ+মাডায়্যা]
১০১.আমিলায়্যা-মিলানো হয়নি এমন [আ+মিলায়্যা]
১০২.আমিল্যা-অমিল [আ+মিল্যা]
১০৩.আমুচুজ্যা-মোচড়ানো হয়নি এমন [আ+মুচুজ্যা]
১০৪.আমুইজ্জ্যা-মরেনি এমন [আ+মুইজ্জ্যা]
১০৫.আরান্ন্যা-অরন্ধিত [আ+রান্ন্যা]
১০৬.আরুক্ক্যা-অরোপিত [আ+রুক্ক্যা]
১০৭.আলাক্ক্যা-লাগেনি এমন [আ+লাক্ক্যা]
১০৮.আলাজ্জ্যা-নাড়েনি বা ব্যবহার করেনি এমন [আ+লাজ্জ্যা]
১০৯.আলাহায়্যা-অরোপিত [আ+লাহায়্যা]
১১০.আলিক্খ্যা-অলিখিত [আ+লিক্খ্যা]
১১১.আলিপ্প্যা-লেপন করা হয়নি এমন [আ+লিপ্প্যা]
১১২.আলুআয়্যা-লুকানো হয়নি এমন [আ+লুআয়্যা]
১১৩.আলুজ্যা-নড়েনি এমন [আ+লুজ্যা]
১১৪.আসরায়্যা-সরানো হয়নি এমন [আ+সরায়্যা]
১১৫.আসিক্ক্যা-সেঁকা হয়নি এমন [আ+সিক্ক্যা]
১১৬.আসিয়ায়্যা-শেখানো হয়নি এমন [আ+সিয়ায়্যা]
১১৭.আসিরায়্যা-সারানো হয়নি এমন [আ+সিরায়্যা]
১১৮.আসীক্ক্যা-সেলাই করা হয়নি এমন [আ+সীক্ক্যা]
১১৯.আসুআয়্যা-অশুষ্ক [আ+সুআয়্যা]
১২০.আসুইজ্জ্যা-ঝাড় দেওয়া হয়নি এমন [আ+সুইজ্জ্যা]
১২১.আসুগুজ্যা-সামলানো হয়নি এমন [আ+সুগুজ্যা]
১২২.আসুম্ম্যা-ঢুকেনি এমন [আ+সুম্ম্যা]
১২৩.আহাগ্গুজ্যা-পোঁদ মলমুক্ত করা হয়নি এমন [আ+হাগ্গুজ্যা]

দৈংনাক-তৈনটংগ্যা-তঞ্চঙ্গ্যা

 

দৈংনাক, তৈনটংগ্যা এবং তঞ্চঙ্গ্যা এই তিনটি নাম একই জনগোষ্ঠীর নির্দেশক। বাংলাদেশ, ভারতের অরুনাচল, মিজোরাম এবং ত্রিপুরাতে তারা তৈনটংগ্যা বা তঞ্চঙ্গ্যা নামে চিহ্নিত এবং পরিচিত। আরাকান তথা মায়ানমারে তাদেরকে দৈংনাক বলা হয়। অর্থাৎ সেখানে তারা দৈংনাক নামেই চিহ্নিত বা পরিচিত। দৈংনাক আরাকানী শব্দ; অর্থাৎ যোদ্ধা। তঞ্চঙ্গ্যা নাম আরাকান তথা মায়ানমারে তেমন প্রচলিত নয়। সেখানে দৈংনাক নামেই তঞ্চঙ্গ্যাদের অভিহিত করা হয়।

উচ্চব্রহ্মেই সর্বপ্রথম দৈংনাকদের নাম পাওয়া যায়। অদ্যবদি উত্তর মায়ানমার ও আরাকানে দৈংনাক নামেই তঞ্চঙ্গ্যাগণ আছেন। ইতিহাসের সূত্র অনুসারে একাংশ আরাকানের উত্তর পশ্চিম দিকে সরে আসে এবং মাতামুহুরীর অপর উপনদী তৈনছড়িতে বসতি স্থাপন করে। দীর্ঘকাল ধরে চাকমাদের পাশাপাশি বসবাস এবং সুখ, দুঃখ, ব্যথা, বেদনা, বিপদ আপদের অংশীদারী বলে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাগণ পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতায় তথাকথিত একই জাতি বলে বিশ্বাসী। পরবর্তীতে তাই দৈংনাকগণ তৈনছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির (রাঙামাত্যার) দিকে সরে আসে। চাকমা রাজ সরকারের জুম তৌজিতে তাদেরকে চাকমা বলে উল্লেখ করা হয়নি। তৈনছড়ি এলাকা থেকে আগত বলে তাদেরকে তৈনটংগ্যা নামে তৌজিভুক্ত করা হয়। এই তৈনটংগ্যা শব্দের পরবর্তী রূপ হচ্ছে তঞ্চঙ্গ্যা।

নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তঞ্চঙ্গ্যাগণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মংগোলীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা ভারতীয় আর্য ভাষা সম্ভূত বাংলার আদিরূপের সমতুল্য। বহুপালি, প্রাকৃত ও সংস্কৃত শব্দে তাদের ভাষা পরিপূর্ণ।

তঞ্চঙ্গ্যাদের স্বভাব চরিত্র নম্র, রুক্ষতা বর্জিত বিনয়ী। তারা সাধারণত লাজুক স্বভাবের এবং মেজাজে উগ্রতা বর্জিত সরল, সাদাসিধা এবং বন্ধুভাবাপন্ন ও উপকারীর প্রতি তারা সর্বদা কৃতজ্ঞচিত্ত।

তঞ্চঙ্গ্যাগণ মূলত কৃষিজীবী। কৃষিকার্যে তারা অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। কৃষি জমির স্বল্পতার কারণে বর্তমানে উচ্চভূমি বা পাহাড়ে বিভিন্ন ফলের বাগান ও মূল্যবান বৃক্ষের বাগান করে অর্থোপার্জনের উপায় করছে। উর্বর পাহাড় জমির অভাবের কারণে জুমচাষ পদ্ধতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ইদানিং উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন বিধায় মরিয়া হয়ে সাধারণ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণে তারা বদ্ধপরিকর। অনেকেই প্রযুক্তিগত জীবিকা অবলম্বনের জন্য যোগ্যতা অর্জন নিমিত্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ব্যবসায়ে তারা এখনো পশ্চাদপদ তার কারণ যোগ্যতার অভাব নয় বরঞ্চ Scope এর অভাব হয়ত।

তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি 

বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

তঞ্চঙ্গ্যা মহা সম্মেলন ১৯৯৫ ইং

Paradigm of Verbs in/of the Tanchangya Language: An Introduction

By: Shuva Langker Tanchangya

 

The beauty of a language and its taste is tangible when one knows the usage of the words of a particular language. Provided that in English there are ‘eight parts of speech’ that form the English language are being used in daily interaction in expressing ideas and thoughts. But, of the eight parts of speech, the role of the verb is given priority because the verb plays the vital role in any language in expressing or presenting the actions, the ideas and thoughts of a person. The verb itself can play the role of a complete sentence in a language, and the Tanchangya language is no exception. Such as when the term ‘hà” is formed from the root √ha (to eat), it gives the complete sense of the sentence as “you eat”. Thus the verb is the most important science of a language, even in Tanchangya language too.

The origin of the Tanchangya language is yet uncertain and still needs further anthropological research although historically/traditionally claimed the Tanchangyas are Mongolian origin, which puts forth the idea that the Tanchangya language is a Mongolian origin or of a similar kind. But, it is hard to accept such a conclusion since there has been no any proof to show any similarity between the two at least in some extent. However, when scrutinizing the elements of the Tanchangya language, grammar, sentence formation, conjugation etc, it is no doubt that one could still as certain that the Tanchangya language is a mixture of the languages belonging to the Modern Indo-Aryan Language family, such as Bengali, Hindi, and Urdu, etc. It is, in fact, a reasonable fact to be believed for in a greater extent there is much similarity between the Tanchangya language and the languages of the Modern Indo-Aryan Languages. For example, in Tanchangya the word for water is “pani,” which is also explicitly being used both in Bengali and Hindi. There are many such examples. Moreover, it can also be traced to the Middle-Indo Aryan Languages such as Pali and Sanskrit.

Speakers of Tanchangya language are geographically found in some parts of Burma, India and Bangladesh. Despite the fact that the Tanchangya alphabets are recently been into existence it is unknown to many of the Tanchangyas since yet no media has been introduced to promote (the alphabets). Therefore, the Tanchangya language from the earliest time has been surviving orally among its speakers. It is due to this very reason that the language is facing hard time to expand from its original regions, and hardly being spoken even within its people who have been abandoned from the language since their childhood. But, here, the main focus would be paid to the verbs and their conjugations. It is with the usage of the verb that the time itself could be indicated, like past, present and future.

present tense

Note: in some cases, some verbs take “e” as the ending, specially in the 3rdperson singular, in the present tense. Example, gōre (does), dhōre (holds), lōre (moves) etc.

Examples:

Té bhàt hài – he eats rice.

Té gorot thài – he stays at home.

Té kam gōre – he works.past tense

Note: while forming the past tense some verbs undergo little internal changes keeping the terminations as they are; which has no specific rule and the readers are advised to get use to it through often practice. Through this the nature of their regularity of the verbs in Tanchangya language could be noted clearly. Example, giye (went), tuye (kept), luye(took) etc.

Example:

1.     Té gorot giye– he went home.

2.     Té gan(ekkhan) gaye – he sang a song.

future tense.JPG

Note: in this case, a root ending with “a” does not undergo any changes when forming future tense, such as √ja(to go) > jàb (he’ll go). But, a root ending with “o” changes into “u”, such as √lô (to take) > lùb (he’ll take), while “i” is inserted in between the root ending with “r” and the case termination and at the same time“o” changes into “u”, such as √dhor (to hold) >dhurib (he’ll hold).

Example:

1.     Té Thàb (he’ll stay)

2.     Té Guribo (he’ll do)

present conyinuous tense

 Example:

1.     Té Hàr (he’s eating)

2.     Té Dhar (he’s running)

In the case of the Continues tense I, case termination “r” is invariable, while changes happen in the middle between the case termination and the root depending on the root form.

Besides this, there is another notable continues tense in Tanchangya language used more often than not.

presentnperfct

Note: in the Perfect tense I, the case termination is invariable, while the other part of the word changes depending on the root.

prfet2

In the Perfect Tense II, it is clear that same form is used in all three cases/persons, both in singular and plural. The similarity between the Perfect Tenses I and II is the meaning. But, there is specialty in the perfect tense II in employing the meaning; it gives an extra meaning of “after”. Example, Té haihui (after he has eaten)

Gerund or Absolute

When suffix ‘né’ is added to averb stem, while ‘i’ is inserted in between it becomes absolute or gerund in Tanchangya language such as when i+né is added to the root/stem Hà (to eat), it becomes Hàiné (having eaten).

Examples: Pùriné – Having read

Gàdíné – Having bathed

Béràiné – Having wandered

Another form of gerund or absolute is found in Tanchangya language, when 3rd person singular present tense is always used together with the gerund form mentioned above,such as when Hài is added/used with the gerund form Hàiné, it becomes Hàiné hài (having eaten or after eating). But, there are few exceptional cases in which the gerund form does not take the 3rd person singular of the present tense, such as Gàdíné gàdí (having bathed or after bathing), of which the 3rd person singular is Gàdé (he baths).

Examples: Jàiné jàí – Having gone/after going

Béràiné béràí – Having wandered/after wandering

Pùríné pùrí – Having roasted/after roasting

Like any other language, in Tanchangya language too, a sentence is basically consisted of subject, verb and object. When it is said in Tanchangya “mui bhat haŋ” meaning “I eat rice,”vividly presents the three basic elements of sentence formation like that of English language. But, the basic structure of making sentences in Tanchangya language is similar to that of the Modern Indo-Aryan languages, in which subject comes first, object and then the verb. For example, mui (subject) bhat (object) haŋ (verb) = I eat rice (simple present tense). Another important thing to be noted in Tanchangya language is that in informal usage the subjectis very often referred by the usage of the verb, that is only when used together with an object. Example, (ikkulot) jogoi; translation (you) go (toschool).

It is clear according to the above description to conclude that the Tanchangya language also contains all the tenses similar to the tenses used in other languages. The structure of the formation of the Tanchangya language is also explained explicitly and the way to conjugate. In this regard, Tanchangya language too is rich in grammar like that of the Middle Indo-Aryan languages.  However, here the reader is reminded to note that there is yet much to be explored on this subject matter. Here, in an utmost level, I tried my best to present all the tenses of the verb of the Tanchangya language as accurately as possible. The tenses discussed above would be useful and satisfactory as the basic element of a language for a foreigner who is really keen to learn the Tanchangya language. Of course, to note, it is the first work of its kind and in future much more exploration/research is expected on this topic and the history of Tanchangya language (may or may not be by this same author).

Collected from: http://www.utacf.org/apps/blog/show/14753448-paradigm-of-verbs-in-of-the-tanchangya-language-an-introduction

রাজকবি পমলাধন তঞ্চঙ্গ্যা

 

রাঙ্গামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাক্তন বাংলা অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক শ্রীনন্দলাল শর্মা মতে পার্বত্য চটটগ্রাম থেকে সর্ব প্রথম বৌধ ধর্মের পুস্তক প্রাকাশ করেন রাজকবি পমলাধন তঞ্চঙ্গ্যা। রাইংখ্যং নদীর তীরবর্তী হাজাছড়ি গ্রামে তার জন্ম হয় আনুমানিক ১৮৯৫ ইং সনে। তাঁর প্রথম ধর্মীয় কাব্য পুস্তক “ধরম্মধব্জ জাতক” প্রাকাশিত ১৯৩১ ইং সনে। এর পর ১৯৪৩ ইং সনের দিকে “সত্য নারায়নের পাঁচালী”, এর পর “কর্মফল” প্রাকাশিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের লোকদের কাছেও সত্য নারায়নের পাঁচালী অতি প্রসিদ্ধ। তিনি মিস্রিত   তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা ভাষায়  রুত্তি  বারমাস, আলস্যা মেলার কবিতা, বিয়াল্লিশর ভাতরাদ নামে তিনটি বারমাস ছাড়াও “চান্দোবী বারমাস” নামে মূল পাণ্ডুলিপি লিখেসিলেন বলে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রী তরুণ চন্দ্রের নিকট শোনা গিয়েছে।

রাজকবি পমলাধনের নিজস্ব হ্যান্ড প্রেস ছিল। তিনি কাটের হরফ বা অক্ষর তৈরী করে ট্যাট্যা চুলর উপর জমে থাকা ধোয়ার আন্নোয়াল (কালি, পাতার রস ও কেরোসিন মিশিয়ে প্রেসের ছাপার কালি তৈরী করেছিলেন বলে জানা যায়। ছাপা অক্ষরের প্রথম “ চংমা লেগা শিক্ষা” পুস্তক বের করেন ১৯৩৮ ইং সনে এর আগে।

চাকমা রাজা ভুবন মোহন রায় “রাজকবি” উপাধিতে ভূষিত করে রাজসভায়  তাঁকে সমাসীন করেন। সুচিকিৎসক মগা শাস্ত্রে অভিজ্ঞ ইনি ভারত ও বার্মার সুচিকিৎসায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

তথ্যঃ- “তঞ্চঙ্গ্যা জাতি” লেখকঃ- শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা), প্রতিষ্ঠাতাঃ- রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমী।

তঞ্চঙ্গ্যা রূপকথা – তেন্দেরার পচ্ছন

Angu.jpg

জালিম্বর একজন আঙু। “আঙু” হল সমাজপতি বা দলপতি। পরবর্তীতে কোন তালুকের অধিকারীকে আঙু বলা হয়। জালিম্বর একদল লোক নিয়ে রোয়াঙ্গ (আরাকান) থেকে যখন আনকে (চট্টগ্রাম অঞ্চলকে রোয়াঙ্গারা আনক অর্থাৎ পশ্চিম দেশ বলে) আসে তখনো চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোগলদের প্রভাব ছিল। তাই দলবল নিয়ে সে নাক্ষ্যংছড়ি ও রামু হয়ে উত্তর দিকে সরে ক্রমে ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তখন সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে কোন সরকারী বনাঞ্চল ছিল না, বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল মুক্ত বনাঞ্চল। জালিম্বর আঙুর দলবল তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই ছিল। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের এক সুবিধাজনক স্থানে গ্রাম পত্তন করে জালিম্বর আঙু তাঁর দলবল নিয়ে বাস করতে থাকে। তাঁর দলের লোকেরা জালিম্বরকে আঙু বলে মেনে নেয়। সে জালিম্বর-আঙু নামে পরিচিত হয়। বিয়ের সাত বছর পর তাঁর একমাত্র পুত্রের জন্ম হয়। জালিম্বর এবং তাঁর স্ত্রী বাদীমুই ছেলেটিকে কিভাবে আদর করবে তা নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হত। তাঁরা অতি আদরের ছেলেটির নাম রাখল চিজিগুলা। কিন্তু পাড়ার লোকেরা কেউ কেউ আদর করে কিংবা বিদ্রুপ করে ডাকে গুলা। চিজি বাদ দিয়ে শুধু গুলা। তাঁরা অতি আদর যত্ন নিয়ে ছেলেটিকে বড় করতে লাগল।

কিশোর বয়সে চিজিগুলার জন্য বৌ আনতে শখ জাগল জালিম্বর আঙুর। পাড়ার সবচাইতে সুন্দরী ফুলরেণুকে চিজিগুলার জন্য বৌ ঠিক করা হল। ফুলরেণু বয়সে গুলার চেয়ে কয়েক বছরের বড় এবং পূর্ণ যুবতী না হলেও তার বিয়ের সাধ হয়েছে। বাগল্যার সঙ্গে তার আইপাই (মন দেয়া নেয়া) এবং ঘনিষ্টতার কথা কারোর অজানা ছিল না। ফুলরেণু এ বিয়েতে কোন মতেই রাজি নয়। তার অভিযোগ হচ্ছে গুলা তার চেয়ে বয়সে ছোট, এখনো কিশোর এবং গুলা ভাল করে কথা বলতে পারে না, তার জিহ্বায় আড়ষ্টতার দোষ আছে। ফুলরেণুর বাবা মা আঙুর একমাত্র সন্তান বিবেচনা করে গুলার সঙ্গে মেয়ে ফুলরেণুর বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছে। বিয়ে যে দিন হবে, তার আগের রাতে ফুলরেণু বাগল্যার সঙ্গে পালিয়ে যায়। সকাল হতে না হতেই ঐ খবরটি জালিম্বর জানতে পারে। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে দিগবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে একজন বিশ্বাসী লোক পাঠিয়ে দিল ভিনগ্রামের তাঁর মামাত ভাই নাগর্য্যার কাছে। লোকটি গিয়ে নাগর্য্যাকে বলল, জালিম্বর তাঁর ছেলে চিজিগুলোকে বর সাজিয়ে নিয়ে আসছে, সে যেন তার মেয়ে মুগুলিকে কনে সাজিয়ে রাখে। চিজিগুলা আর মুগুলির আজই বিয়ে হবে। সব ব্যবস্থা যেন নাগর্য্যা করে রাখে। নাগর্য্যা আর তার স্ত্রী খবরটি পেয়ে বিস্মিত হলেও বরঞ্চ খুশি হল। তার মেয়ে মুগুলির বয়স চিজিগুলার চেয়ে দু বছরের বড়। এমনিতে আত্মীয় আর জালিম্বর হচ্ছে আঙু বা দলপতি, কাজেই নাগর্য্যা আর তার স্ত্রী জালিম্বরের কথায় বেরাজী হল না। মুহূর্তের মধ্যেই লোকজন দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলল নাগর্য্যা মহা ধুমধাম সহকারে না হলেও সে দিন ঠিক ঠিক চিজিগুলা আর মুগুলির বিয়ে হয়ে গেল। পাড়া প্রতিবেশীরা এসে ভুরি ভোজন করে চিজিগুলা আর মুগুলিকে আশীবাদ করল।

জালিম্বর আঙু জুম চাষ করলেও তার কিছু ধান্যজমি আছে। গরু, ছাগল, মহিষ, শূকর, হাঁস-মুরগি গৃহপালিত পশু-পাখি তাঁর অঢেল আছে। তাঁর পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল। একেবারে ধনী বলা না গেলেও দরিদ্র নয় জালিম্বর আঙু।

মুগুলির সঙ্গে বিয়ে হলেও চিজিগুলা ফুলরেণুকে ভুলতে পারেনি। তার কথা মাঝে মাঝে মুগুলিকে শোনায়। উভয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে এ ব্যাপারে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাটি হয়। চিজিগুলা আর মুগুলির বিয়ের তিন বছর পর জালিম্বরের স্ত্রী মারা যায়। এর চার বছর পর জালিম্বরও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। চিজিগুলা আর মুগুলির জোড়া তালি দিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। পাড়ার লোকেরা তাদের শেষাংশ উচ্চারণ করে ডাকে। যেমন – চিজিগুলাকে শুধু গুলি। উভয়ের কথা বলতেই শুধু গুলাগুলি উচ্চারণ করে হাসে আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। গুলাগুলির সংসারে বিয়ের দীর্ঘ ছয় বৎসরেও কোন সন্তান সন্ততি হয়নি। জালিম্বর আঙু স্বপ্নে দর্শন দিয়ে গুলাকে বলে, চিজিগুলা তোমরা বড় একা হয়ে গেছ, আমি আসছি। আমি তোমার ঘরে আসছি। কিছুদিনের মধ্যে গুলা বুঝতে পারল গুলি গর্ভধারণ করেছে। সে তার স্বপ্নের কথা গুলিকে বলে ফেলল। তাদের বিশ্বাসমতে গুলার পিতা জালিম্বর পুনর্জন্ম গ্রহণ করেছে। এতে তারা খুশি হল। ঠিক দশ মাস দশদিন পর মুগুলি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাদের আনন্দ এখন দেখে কে!

সন্তানটি বড় হতে থাকে। যখন হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে, পাড়া মাতিয়ে রাখে ছেলেটি। তার বাবা-মাকে সে বাবা-মা ডাকে না। বাবাকে ডাকে গুলা আর মাকে ডাকে গুলি। অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে আলাদা এবং ভিন্ন প্রকৃতির হয়েছে ছেলেটা। তার কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচরণে চাতুর্য প্রকাশ পেতে থাকে। পাড়ার লোকেরা তাকে তেন্দেরা নামে ডাকতে থাকল। একদিন গুলা এবং গুলিও ছেলেটিকে তেন্দেরা নামেই ডাকতে থাকে। একদিন গুলা জঙ্গল থেকে একটি কচ্ছপ ধরে নিয়ে এল ঘরে। ডিমওয়ালা কচ্ছপ। কচ্ছপ কেটে রান্না করা হলে তেন্দেরা বলল যে, সে ডিমগুলোই খাবে, ডিম বাদে কিছুই খাবে না। গুলা এবং গুলিও এতে খুশি। একটি মাত্র ছেলে, সে না খেলে খাবে কে? কিন্তু কচ্ছপের সেই হলদে রঙ্গের ডিমগুলো খাওয়া শেষ করে তার বাবা-মাকে বলতে লাগল, ইস! তোমরা কী খাচ্ছ? আমাকে একটুও দিলে না। আমিও কচ্ছপের মাংস খাব। কচ্ছপের মাংস পেট ভরে খেল ডিমগুলো খাওয়ার পর। খেয়ে বলতে লাগল, ইস এটা ডিমের চেয়ে সুস্বাদু। সে মুরগি বা মোরগের গিলা, কলিজা খায় না, শুধু খায় মাথা, ঠ্যাং ইত্যাদি। গুলাগুলি এই ডানপিটে ছেলে তেন্দেরার কান্ডে অবাক হয়ে থাকে।

বয়স বার, তের হতে না হতেই তেন্দেরার দেহে, মনে যৌবন এসে গেল। সে পাড়ার তরুণীদের পিছে পিছে ঘুরে বেড়ায়। পাড়ার ছেলেরা তাকে চোখে চোখে রাখে, সাবধান করে। গুলাগুলি ছেলের এই আচরণ দেখে মর্মাহত হয় এবং তার জন্য বৌ আনার সিন্ধান্ত নেয়। পাড়ায় অনেক তরুণী তাকে পছন্দ করলেও তেন্দেরা বিয়েতে রাজি হয়নি। তাই একদিন তারা তেন্দেরাকে ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। তাকে বলে দেয় যে, সঙ্গে বৌ না নিয়ে আসলে ঘরে উঠতে পারবে না।

তেন্দেরা কোন কথা না বলে বেড়িয়ে পড়ল শূণ্য হাতে। পকেটে টাকা পয়সা নেই। কোন যুবতীর মন পেতে হলে নূন্যতম পক্ষে সুগন্ধি তৈল, আয়না, চিরুনি দিতে হয় একথা তেন্দেরার জানা আছে কিন্তু সে এগুলো পাবে কোথায়? টাকা পয়সা থাকলে বাজার থেকে সে কিনে নিতে পারত। কিভাবে টাকা পাওয়া যায় একথা ভাবতে ভাবতে তেন্দেরা এক স্থানে গিয়ে দেখে একজন চাষী হাল চাষ করছে। এক জোড়া মহিষের হাল। সে মিষ্টি কথা বলে চাষীর সঙ্গে সখ্যতা করে বলল, দাদা তুমি বিশ্রাম কর, আমি তোমার বদলে হাল চালাই। লোকটি তাতে রাজি হল এবং তেন্দেরা হাল চষতে লাগল। বেশ খানিকক্ষণ চষার পর তেন্দেরা লোকটিকে বলল, দাদা মশা-মাছি মহিষ দুটোর গায়ে বসে বড় উৎপাত করে। এতে মহিষগুলো বিরক্ত হয়, লাঙ্গল টানতে চায় না। বরঞ্চ মহিষ দুটোর গায়ে কাদা লেপে দিলে মশা-মাছি গায়ে বসে উৎপাত করবে না। মহিষ দুটো আরাম করে হাঁটবে, লাঙ্গল টানবে। দাদা, আমি তাই করি,  কী বল? লোকটি আপত্তি করল না। তেন্দেরা মহিষ দুটোর গায়ে ভালভাবে কাদা লেপে দিল। সূর্যের তাপে কাদা শুকালে মহিষ দুটোর কালো রং সাদা হয়ে গেল এবং দুটো সম্পূর্ণ নতুন মহিষ বলে মনে হতে লাগল। তেন্দেরা একটু পর লোকটিকে বলল, দাদা আমার পানির তৃঞ্চা পেয়েছে, তোমার ঘরে গেলে কি পানি খেতে পারব? লোকটি বলল, “সে কি কথা? পানি কেন পাবে না? যাও ঐ যে টিলার ওপর ঘর, ওখানে গিয়ে স্ত্রীকে বললে পানি দেবে। তেন্দেরা সন্দেহের ভান করে বলল, দাদা যদি পানি না দেয়, তখন আমি তোমাকে বলব, দিচ্ছে না তাহলে তুমি তাকে দাও, দাও বলবে তো?” লোকটি স্বাচ্ছন্দে রাজি হল। তেন্দেরা ধীর পায়ে টিলার ওপর লোকটির ঘরে গিয়ে তার স্ত্রীকে বিনয় সহকারে কুশল জিজ্ঞেস করে, খুশি করল। তারপর বলল, বৌদি দেখ, দাদা মানে তোমার স্বামী একটু আগে আমার কাছ থেকে এক জোড়া হালের মহিষ কিনেছে ঐ দেখ সাদা মহিষগুলি। তোমার নিকট থেকে মহিষ দুটোর দাম দু’শো টাকা নেবার জন্য দাদা পাঠিয়েছে, তুমি আমাকে দু’শো টাকা দাও। তখন স্ত্রী লোকটি উত্তরে বলল, কি যাতা বলছ, আন্দাজে কেন টাকা দেব? তেন্দেরা বলল, তাহলে আমি তোমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করছি, দেখ সে কি বলে। তেন্দেরা ডাক দিয়ে লোকটিকে বলল, দাদা কথামত তোমার স্ত্রী দিচ্ছে না। এই কথা শুনে লোকটি রাগত স্বরে জোরে জোরে বলল, আরে দাও, দাও। অগত্যা স্ত্রী লোকটি বাক্স থেকে তাড়াতাড়ি বের করে দুশো টাকা দিয়ে দিল। তেন্দেরা টাকা পাওয়া মাত্রই সেখান থেকে চম্পট দিল দূরে অনেক দূরে। হাঁটতে হাঁটতে সাত গাঙ সাত পাড়া পার হয়ে এক বাজার থেকে সুগন্ধি তেলের বোতল, আয়না, চিরুনি এবং অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী কিনে থলে ভর্তি করে নিল। একদিন সাঁঝের বেলা শামুকছড়ি পাড়ে এক পাড়ায় এসে পৌঁছাল তেন্দেরা। পাড়ার এক প্রৌঢ়া ও একজন তরুণী। মা ও মেয়ে। মা মেয়েটিকে নদী থেকে পানি আনতে বলছে, কিন্তু মেয়েটি সাঁঝের বেলায় একা পানি আনার জন্য যেতে ভয় পাচ্ছে। তেন্দেরা তরুণীকে দেখে পছন্দ করল। প্রৌঢ়া মহিলাকে মাসী সম্বোধন করে কুশল জিজ্ঞাসা করল। প্রৌঢ়া মহিলা বিস্মিত হয়ে তেন্দেরাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে গো! আমাকে কেন মাসী ডাকছ, আমার তো এ জম্মে কোন বোন নেই। তুমি কোথেকে এলে? তেন্দেরা বিনীতভাবে বলল, আমি তোমাকে আমার মায়ের মতই দেখছি। আমার মায়ের চেহারা ঠিক তোমার মত। যা হোক আমি তোমাকে মাসি বলে ডাকব। মাসী আমাকে কলসিটা দাও, আমি পানি এনে দিচ্ছি। মা ও মেয়ে উভয়ে খুশি হল। তরুণীটি কলসিটি তেন্দেরার হাতে দেওয়ার সময় তেন্দেরা তার থলেটি তরুণীর হাতে দিয়ে বলল, বোন এই থলেতে যা আছে সব তোমার জন্য এনেছি, তুমি রেখে দাও। তেন্দেরা কলসিটি ভরে পানি নিয়ে উঠানে পৌঁছার আগে থেকে প্রৌঢ়া বকবক করছিল। তেন্দেরার কানে গেল প্রৌঢ়ার কথা গুলো, কোথা থেকে কে আসল এই সাঁঝের বেলা। তাকে রাত্রে থাকতে দেব কিভাবে? তেন্দেরা মনে মনে ভাবল তাহলে তাকে কি এখানে থাকতে দেবে না? সে ফন্দি আঁটতে লাগল কিভাবে এই ঘরে থাকা যায়? পানির কলসি ঘরে তুলে দিয়ে মহিলাকে জিজ্ঞেস করল, মাসীমা কী কী কাজ আমাকে দাও আমি করে ফেলি। আমাকে অন্য ঘর খুঁজতে হবে থাকার জন্য। মহিলা বুঝল তেন্দেরার এখানে থাকার ইচ্ছা নেই, অথচ কাজ করে দিতে বলছে। তখন তেন্দেরাকে জিজ্ঞস করল, তুমি কোথা থেকে আসছ? কে তুমি? তেন্দেরা জবাব দিল সে আঙু জালিম্বরের নাতি। তখন মাহিলার মনে আগের কথা স্মরণ হল, ভাবতে লাগল সে। জালিম্বর আঙু তার ছেলে চিজিগুলার জন্য তাকে বৌ ঠিক করেছিল। কিন্তু যে দিন বিয়ে হবে তার আগের রাতে বাগল্যার সঙ্গে সে পালিয়ে গিয়েছিল। ছয়/ সাত বছর সুখে ঘর করে একমাত্র কন্যা কুকলিকমালা জম্ম গ্রহণ করে এবং তার জম্মের এক বছর পর বাগল্যা মারা যায়। প্রৌঢ়া ফুলরেণু তেন্দেরার বাপের নাম জিজ্ঞেস করতেই তেন্দেরা জবাব দিল, তার বাপের নাম গুলা। এবার ফুলরেণু বলল, তুমি চিজিগুলার ছেলে তাহলে? তেন্দেরা হ্যাঁ বলল, এই সাঁঝের বেলা আর কোথায় যাবে, এখানেই থাক। এর আগে কোনদিন কোন ছেলে বা পুরুষকে আমাদের ঘরে থাকতে দেইনি, আমার মেয়ে কুকলিকমালা।

মেয়ে কুকলিকমালাকে তেন্দেরাসহ তিনজনের ভাত রাঁধতে বলল ফুলরেণু। কুকলিকমালা ইতোমধ্যে তেন্দেরার দেওয়া থলে থেকে সুগন্ধি তেল মাথায় দিয়ে আয়না দেখে চুল আঁচড়িয়ে মনের মত সেজেছে। সে কোন কথা না বলে ভাত রাঁধতে শুরু করে। তেন্দেরার আগমনে সে খুশি হয়েছে!

একদিন দুদিন থেকেও তেন্দেরা ঘর থেকে চলে যাওয়ার নাম করল না। মা আর মেয়েও উচ্চবাচ্য করেনি। তেন্দেরা ফন্দি আঁটে কিভাবে কুকলিকমালাকে বৌ করে ঘরে নিয়ে যাবে। ফুলরেণু মাঝে মাঝে ভাবে, চিজিগুলা ভালভাবে কথা বলতে পারে না। জিব্বায় যেমন জড়তা আছে তেমনি জড়বুদ্ধি সম্পন্ন। তার ছেলে তেন্দেরার বুদ্ধিইবা কত হবে, আর এই তেন্দেরা তার মেয়ে কুকলিকমালার জামাই হবে কিভাবে? ফুলরেণু একদিন রাত্রে তেন্দেরাকে বলল, তুমি দেখছি এখানে থেকে চলে যাবার নামও করছ না, এভাবে থাকলে লোকে বদনাম করবে। তুমি আমার জন্য তিনটা জিনিস নিয়ে আস, যদি নিয়ে আসতে পার তবে এখানে থাকতে পারবে এবং আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করলে তার সাথে বিয়ে দেব। আর যদি তিন দিনের মধ্যে এ জিনিস গুলি আনতে না পার তবে এখান থেকে চলে যাবে বুঝলে? সেই তিনটি জিনিস হল – (১) বোঁটাহীন ফল, (২) যে ফলের বিচি বাইরে এবং (৩) যে জিনিস এক বাটি খেলেও সেই বাটি পূর্ণ থাকে সেই জিনিসে। এই তিন দ্রব্যের নাম শুনে তেন্দেরা বোকা বনে গেল। আসলে সে ঐগুলি চিনে না। সে হতাশ হয়ে গেল। তেন্দেরা ম্লান মুখে কুকলিকমালাকে বলল যে, সে এখান থেকে চলে যাচ্ছে। কুকলিকমালা তেন্দেরাকে পছন্দ করে ফেলেছে তাই তেন্দেরাকে এই তিনটি দ্রব্য কী কী এবং কোথায় পাওয়া যায় তার সন্ধান দিল। সে বলল, তুমি চিন্তা কর কেন? এগুলো নিয়ে আস যাও। সে বলল, আমাদের ঘরের পাশে যে ছড়া তার নাম শামুকছড়ি। এই ছড়ার উজানে যেতে যেতে ডানে একটা ছড়া দেখবে তার নাম তামছড়ি। সেই ছড়ার দু’ধারে অনেক ফল গাছ। ওগুলো তাম গাছ। দেখবে তাম (কাগু বাদাম) ধরে আছে গাছে। ফলগুলোর বাইরে বিচি। এখান থেকে তাম পেড়ে নিয়ে আসার সময় দেখবে ছড়াতে অনেক শামুক। সেই শামুক কুড়িয়ে নিয়ে আসবে। যাও দেরি করোনা। তেন্দেরা তার কথামত গিয়ে দেখে সত্যই গাছে তাম ফল ঝুলতেছে। সে পাকা তাম ফল এক থলে নিয়ে আসার সময় এক থলে শামুকও কুড়িয়ে নিল ছড়া থেকে। তখন দুপুর হয়ে গেছে। ঠিক তখন কুকলিকমালার মুরগিটা কক কক কতাক কক কক কতাক করে ঘরের বেড়ায় টাঙ্গানো খোপ থেকে নেমে গেল। তেন্দেরা সেখানে পৌঁছলে কুকলিকমালা তাকে ঐ খোপ থেকে মুরগির পাড়া ডিম নিয়ে আসতে বললে তেন্দেরা ঠিক ডিমটা নিয়ে এল। এবার কুকলিকমালা তেন্দেরাকে ঐ তিনটা জিনিস সহ তার মার কাছে নিয়ে গেল। ইশারায় ঐসব জিনিস তার মাকে দিতে বলল কুকলিকমালা। ফুলরেণু তিনটা জিনিস পেয়ে খুশি হল। তখন কুকলিকমালা তেন্দেরাকে বলল ডিম হচ্ছে বোঁটাহীন ফল, তার কোন বোটা নেই। তামের বিচি ফলের বাইরে। ফলের নিচে ঝুলে থাকে। আর শামুক একবাটি খেলেও (তার সাঁশ খাওয়া যায়) খোলসগুলো পড়ে থাকে কাজেই একবাটি খেলেও এক বাটিই অবশিষ্ট থাকে। তেন্দেরা কুকলিকমালার কথা মত বুঝিয়ে বলল। ফুলরেণু খুশি হল। কিন্তু তা স্বত্বেও তার মেয়ে কুকলিকমালাকে চিজিগুলার ছেলে তেন্দেরার জন্য বৌ দিতে রাজি নয় ফুলরেণু। কুকলিকমালা জানে তার মা ফুলরেণু তার বাবা বাগল্যার সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছিল, কাজেই তার মা যদি পালিয়ে গিয়ে তার প্রেমিককে বিয়ে করতে পারে, সে কেন তেন্দেরার সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবে না, ভাবে কুকলিকমালা। এক রাত্রে সত্যি সত্যি তেন্দেরার হাত ধরে পালিয়ে গেল কুকলিকমালা। তেন্দেরা কুকলিকমালাকে নিয়ে সোজা ঘরে ফিরে এল। গুলাগুলি ছেলে আর ছেলের বৌ দেখে মহা খুশি হল।

কিছুদিন পর গুলা তেন্দেরাকে নিয়ে পাড়ালিয়াদের সঙ্গে কাট্টনে গেল। নৌকার কাট্টন। তারা এক মাসের খোরাকি নিয়ে দেড় দিনের হাঁটা পথের গভীর বনে চলে গেল। ঘরে রইল গুলি আর তেন্দেরার নববধূ কুকলিকমালা। একমাসের প্রায় শেষ, কিন্তু নৌকার কাজ এখনো অনেক বাকি এদিকে খোরাকিও প্রায় শেষ হয়ে আসছে। তাই তেন্দেরা বাড়ি ফিরল খোরাকি নিয়ে যাবার জন্য। বাড়ি ফিরে দেখল তার মা ভয়ঙ্কর অসুস্থ। কুকলিকমালা কী করবে দিশেহারা হয়ে আছে। তেন্দেরা বৈদ্য এনে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাল। কিন্তু কয়েকদিন পর তার মা গুলি মারা গেল। তেন্দেরা তার বাবা গুলাকে খবর দিতে পারল না – তার মা শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করল। এদিকে খোরাকি নিয়ে না গেলে তার বাবা উপোসে মরবে, আর খোরাকি নিয়ে কাট্টনে তার বাবার কাছে গেলেও ঘরে কুকলিকমালা একা থাকতে পারবে না। তাই একদিন সে ফুলরেণুকে তেন্দেরার নিজেদের ঘরে আনতে গেল। তেন্দেরা অবশ্য ভেবে নিয়েছে- ফুলরেণু তাদের ঘরে কোনদিন যাবে না। তাই ফুলরেণুর কাছে  পৌঁছামাত্র হাউ মাউ করে কেঁদে বলল, আমরা বাপবেটা নৌকার কাট্টনে গিয়েছিলাম- সেখানে নৌকার কাজ অর্ধেক করে বাবা গুলা মারা গেছে আর সেদিন মা গুলিও মারা গেল। এখন নৌকাটার কাজ সম্পন্ন করে নিয়ে আসতে হবে। বিক্রি করলে টাকা পাবে। তাই আমি কাট্টনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঘরে কুকলিকমালা একা থাকবে কিভাবে? আপনি আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। তেন্দেরার কথা ফুলরেণু ভেবে দেখল।অমনি সে একা থাকা পছন্দ করেনা – এখন তার মেয়ের সঙ্গে তাদের ওখানে থাকলে খারাপ কিছু নয়, তাই তেন্দেরার কথায় সে সহজেই রাজি হয়ে গেল। ঘরের জিনিসপত্র যতটুকু পারে তেন্দেরা নিয়ে নিল। ফুলরেণুও তার কাপড় চোপড় ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যা পারল সঙ্গে নিয়ে তেন্দেরার ঘরে এসে পৌঁছল। দুদিন পর তেন্দেরা কিছু দিনের খোরাকি নিয়ে কাট্টনে তার বাবা গুলার কাছে চলে গেল। সে তার মা গুলির মৃত্যুর কথা তার বাবা গুলার কাছে গোপন রাখল। সে বরঞ্চ বলল যে, তার মা গুলি ভয়ানক অভিমান করে আছে। এত দীর্ঘ সময় যে কোনদিন প্রবাসে কাটায়নি। এবার দীর্ঘদিন ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রবাসে চলে এসেছে গুলা। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার স্বাভাবিকভাবে স্ত্রীর প্রতি দিওয়ানা হয়ে আছে।ছেলের কথা শুনে মনে মনে খুব আফসোস করল। মনে মনে ভাবল এতদিন প্রবাসে থাকা কী ঠিক হল ? তেন্দেরা আবার বলল, তুমি ঘরে গেলে মা কামরাতেই পড়ে থাকবে দেখো। গুলা মনে মনে ঠিক করল তাতে কী আছে যায়, ঘরে গিয়ে সোজা কামরার ভিতরে গুলিকে জড়িয়ে ধরলে সব অভিমান ভেঙ্গে যাবে গুলির। তাই সে জড়িয়ে ধরবে। মনে মনে ঠিক করল গুলা।

কয়েকদিন পরিশ্রম করে বাপ-বেটা অসস্পূর্ণ নৌকাটি সম্পূর্ণ করে বাড়ির দিকে রওনা দিল। দেড় দিন নদীর পথে নৌকাটি ভাসিয়ে এনে একদিন সন্ধ্যায় বাজার ঘাটে ভিড়াল তারা। তেন্দেরা তার পিতাকে বলল, তুমি নৌকাটি বাজারে বিক্রি কর আর আমি আমাদের কুড়াল, দা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি ঘরে নিয়ে যাই। মাকে তুমি এসেছ বলে সংবাদ দিব-তাকে তোমার কথা বুঝিয়ে বলব। এই কথা বলে সে ঘরে এল আর গুলা নৌকাটি বিক্রির জন্য বাজারে থেকে গেল।

ঘরে এসে তেন্দেরা ফুলরেণুকে বলল, আমরা নৌকাটা নিয়ে এসেছি, আমি একা পারিনা বলে আমার এক মামাও সঙ্গে এসেছে। তাকে নৌকা বিক্রির জন্য বাজারে পাঠিয়েছি। সে নৌকা বিক্রি করে রূপার টাকা নিয়ে ঘরে আসবে। সে হয়ত ফিরতে রাত হবে। তোমার খওয়া-দাওয়া করে ঘুমাতে পার ,আমি আমার মামার জন্য জেগে থাকব।গ্রামে সন্ধ্যা হতে না হতেই লোকজন খাওয়া–দাওয়া করে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়ে। তেন্দেরার কথামতে তারা সাঁঝের আঁধার হতে না হতে খাওয়া দাওয়া শেষ করল। তেন্দেরা যতদিন কাট্টনে ছিল, ততদিন ফুলরেণু আর তার মেয়ে কুকলিকমালা ঘরের বারান্দাতে ঘুমাত। আজ তেন্দেরা ঘরে আসাতে কুকলিকমালা আর তেন্দেরা ঘরের পিছনের কক্ষ অজলেঙে ঘুমাবে। তেন্দেরা গুলরেণুকে বলল, আমার মামা এলে খাওয়া দাওয়া, করে এখানে থাকবে। সে বারান্দাতে ঘুমাবে, কাজেই তুমি ভিতরের কামরাতে ঘুমাও।

ফুলরেণু ঘরের ভিতরে বিছানা করে শুয়ে পড়ল। কুকলিকমালা তাদের জন্য অজলেঙে বিছানা প্রস্তুত করে তেন্দেরার কথিত মামার জন্য বারান্দাতে বসে অপেক্ষা করতে লাগল।

গুলা বাজারে নৌকাটি বিক্রি করে রাত হলে রূপার টাকা নিয়ে খুশি মনে ফিরে এল। গুলার মনে আছে, তেন্দেরা বলেছে গুলি তার প্রতি অভিমান করে আছে। গুলা ঘরে ফিরে তেন্দেরা আর কুকলিকমালাকে দেখল কিন্তু গুলিকে দেখলনা। গুলি নিশ্চয়ই অভিমান করে ভিতরে শুয়ে আছে মনে করে গুলা সোজা ভিতরে চলে গেল। তখন সেখানে অন্ধকার। গুলা হাতড়িয়ে ধরতে পেল কে একজন শুয়ে আছে। সে জড়িয়ে ধরল ফুলরেণুকে। ফুলরেণু ঘুম থেকে জেগে হতভম্ব হয়ে হাত–পা ছঁড়তে লাগল। গুলা ততোধিক জোরে চেপে ধরল ফুলরেণুকে। ফুলরেণু ভূত ভূত বলে চিৎকার করলে গুলা বলতে লাগল–না–না আমি ভূত নই।  ফুলরেণু ভয়ে গুলাকে জোরে জড়িয়ে ধরল। তাদের এই হৈ চৈ কালে তেন্দেরা আর কুকলিকমালা বাতি নিয়ে সেখানে হাজির হল। বাতির আলোতে ফুলরেণু দেখল গুলাকে আর গুলা দেখল ফুলরেণুকে উভয়েই হতভম্ব। লজ্জায় তাদের মুখ লাল হয়ে গেল। তাদের এ অবস্থা দেখে তেন্দেরা বলল, তোমরা এভাবে জড়াজড়ি করেছ একথা লোকে জানতে পারবে। কলঙ্কের একশেষ হবে। তার চেয়ে উভয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া ভাল। গুলা আর ফুলরেণু কিছুই বলতে পারল না। তাদের স্মরণ হল – কৈশরেই তো তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তখন হয় নি এখন শেষ বয়সে হলে ক্ষতি কী?


[পচ্ছন – রূপকথা। চিজি – (তুলনীয়) খোকা, গুলা- ফল/fruit.]


বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

তঞ্চঙ্গ্যা রূপকথা লোককাহিনী ও কিংবদন্তী