সাপ্রে বা দৈনাক টং-চং-য়্যা বিবরণ

Tongলেখকঃ- শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, প্রতিষ্ঠাতা- রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমি।
লেখা- ‘তঞ্চঙ্গ্যা জাতি’ বই হতে নেয়া।
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে উত্তর দক্ষিণে প্রলম্বিত ৫০৯৩ বর্গ মাইল আয়তন বিশিষ্ট এক বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চলকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বলা হয়। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল গভীর অরণ্য, হিংস্র প্রাণীকুল এবং দুর্গম পাহাড়ঞ্চল। এখানে পাহাড়িদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের আগমন, নির্গমন এবং অবস্থান অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত।এ সর্ম্পকে ইংরেজরা কেন, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি বাঙালীরাও কিছুই জানতো না। এমনকি বর্তমানে ও এ অঞ্চলের ইতিহাস সবার কাছে অনুঘটিত রয়ে গেছে। অতীতে উত্তর-পূর্ব ভারতের সমগ্র অঞ্চলটি কিরাট ভূমি নামে পরিচিত। পরবর্তী কালে আরাকান সীমানা পর্যন্ত কুকিল্যান্ড হিসেবে পরিচিতি ছিলো। এর পর ইংরেজ শাসনামলে চট্টগ্রামের এই পার্বত্য জেলাকে কার্পাস হল বলা হতো।
ভারতের উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহু রাজ্য ছিলো।এসব রাজ্যে পশ্চিমাঞ্চলের বিদেশীদের আগমন শুরু হয় ৭০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজগণের রাজ্যে সমুহের কোন সার্বভৌম শাসন ক্ষমতার অস্তিত্ব না থাকায় তাদের মধ্যে প্রতিহিংসা ও শত্রুতা বিরাজমান ছিল। এই অনৈক্য আত্মকলহ এবং তাদের মধ্যে বংশ, গোত্র, উঁচু নিচু বর্ণের ভেদাভেদ থাকার কারণে ভারতের উপর বিদেশীর বিজয়কে সহজতর করে তোল। ফলে বহু রাজা বশ্যতা স্বীকার করিছিলেন আর ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এসব কারণে উত্তর পূর্ব ভারতে বসবাসরত মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী দক্ষিণ পূর্ব দিকে ক্রমে অগ্রসর হতে শুরু করে।
এভাবে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসা এক একটি মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তোলে স্বাধীন জীবন যাপনের উদ্দেশ্য সাদেংগীর ধার্মিক ও তার আলোকিত ছিলো বলে গেংখুলীদের গীতের ভাষায় শোনা যায়। রাজা সৈন্য সামন্ত সংগ্রহ করে কালাবাঘা(বর্তমানে কুমিল্লা জেলা) রাজ্যের জালি পাগজ্যা (১)নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন বলে জানা যায়।
সাদেংগীর মূত্যুর বহু বছর পর এই বংশে বিচগ্রী নামে উত্তরসূরী রাজা চেৎ-তো গৌং (চট্টগ্রাম) শাসন করেছিলেন বলে চট্টগ্রামের ইতিহাস (প্রাচীন আমল) মাহবুব রহমান এর পুস্তকে উল্লেখ রয়েছে। অনেকের মতে চাদেংগীর জৈষ্ঠ পুত্রের নাম বিচগ্রী (২)। যাইহোক বয়প্রাপ্ত হবার সাথে সাথে যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন কুমার বিচগ্রী। উক্ত সময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিনাঞ্চল সহ রোয়াং (আরাকান) অবধি শাসন করতেন অক্সারাজা। পার্শবর্তী দেশের রাজাগণের কাছে অজানা ছিলোনা তাঁর সৈন্য শক্তি ও পরাক্রমের কথা। এদিকে বিচগ্রী সৈন্য সংগ্রহ করে কোন এক শুভদিনে তিনি বেড়িয়ে পড়লেন অক্সারাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে। সেনাপতি হিসেবে রাধামন ও জয়রাম দুই বিচক্ষণ যোদ্ধা। যুদ্ধের উভয় পক্ষের বহু লোকের হতাহতের পর অবশেষে অক্সারাজা পরাজিত হয়ে বার্মায় পলায়ন করেন।
যুদ্ধ বহু বৎসর অবতীর্ণ হবার পর বিচগ্রী তার পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নি ও প্রতিবেশীর কথা মনে পড়ে প্রাণ কেঁদে ওঠে। তাই তিনি বিজয় আনন্দ উল্লাসে একদিন স্বদেশের দিকে রওনা দিলেন। স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের আগে পথে শুনতে পেলেন তার বৃদ্ধ পিতার মৃত্যু হয়েছে, ছোট ভাই উদগ্রী স্বঘোষিত রাজা হয়ে তাঁকে স্বদেশ ফেরার পথে বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই সংবাদ পেয়ে বিচগ্রী খুবই মর্মাহত হন এবং অনুজের দুরভিসন্ধি ও বিশ্বাস ঘাটকতায় তিনি স্বদেশের স্বজাতির মুখ দর্শন করতে না পেরে পুনঃরায় তাঁর অধিকৃত রোয়াং রাজ্যে অর্থাৎ আরাকানে ফিরে যান। ১১০০ খ্রীষ্টাব্দে সেখানে স্থায়ী বসবাস, রাজ্য শাসন ও বংশ রক্ষার জন্য সৈন্যদের মধ্যে অনেকেই ভিন্ন জাতীয় রমনী বিবাহ করেন। আবার অনেকেই স্বদেশে গিয়ে স্বজাতি রমনী বিবাহ করেন। এভাবে রোয়াং রাজ্যে এজাতির বসতি স্থাপন গড়ে ওঠে।
রাজা বিচগ্রী অপুত্রক ছিলেন। সম্ভবতঃ সম্রাট অশোকের মতো কলিঙ্গ বিজয়ের যে রক্তপাত হয়েছিলো তেমনি বিচগ্রীর শেষ জীবনে ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেন রক্তপাত দেখে এবং তার অনুসারীগণ, সবাই বৌদ্ধ ধর্মে পুরোপুরি দীক্ষিত হন। বিচগ্রীর মৃত্যুর পর বহু বছর পর্যন্ত আরাকান আরাকানের কিছু অংশ তাদের অধীনে ছিলো। উত্থান পতনের মধ্যে পরবর্তীতে চাপ্রে নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। যাই হোক চাপ্রে এই পরিব্যাপ্ত শব্দটি শত শত বছরে স্মৃতি এবং আরাকানী ইতিহাস গ্রন্থেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সা-প্রে অর্থ চাকমা রাজ্য। তবে চাপ্রে বা সাপ্রে বলতে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা জাতিকে বুঝায়। তঞ্চঙ্গ্যাদের সাতটি গছা বা গোত্রের মধ্যে দৈন্যাগছা, মংলা গছা ও ম্মেলংগছার লোকদের এখনো সবাই চাপ্রে নামে অভিহিত করে আসছে এবং নিজেরাও চাপ্রে কুল্যা বলে দাবি করে আসছে।
[গবেষকদের মতে বিচগ্রী, উদগ্রী ও সমগ্রী নামে তিন ভাই। চাকমাদের ভাষায় বিজয়গিরি, উদয়গিরি ও সমরগিরি। আবার ত্রিপুরাদের রাজঁমালা ইতিহাসের মতে দেখা যায় বিজয় মানিক্য, উদয়মানিক্য ও অমর মাণিক্য নামে ত্রিপুরা রাজা ছিলেন। ত্রিপুরা জাতির সেনাপতির নাম, কালানজির, রণগণ ও নারায়নের সংগে আমাদের সেনাপতি কালাবাগা, রাধামন ও জয়রামের অদ্ভুদ মিল দেখা যায়।]
চাকমা ইতিহাস মতে ১৩৩৩-১৩৩৪ খ্রীষ্টাব্দে আরাকানে বার্মা শাসকের সাথে চাপ্রে জাতির রাজা অরুণ যুগের ভীষণ যু্দ্ধ হয়। উক্ত সনে ১৩ই মাঘ ১০,০০০ সৈন্য এংখ্যং ও ইয়াংখ্যং নামক এলাকায় বসবাস করেন এবং আরাকান রাজা তাদের কে দৈনাক বা দৈংনাক অর্থাৎ অস্ত্রধারী যোদ্ধা নামে আখ্যায়িত করেন।
অক্সারাজার সাথে চাপ্রেদের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। বার্মারাজ মেঙ্গদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য চাপ্রেরাজ যে ফন্দি করেছিলেন তা লোক প্রবাদ নিম্নরূপঃ-
চাপ্রেরাজের তুলনায় মেঙ্গদি রাজের শক্তি বহু বেশী। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন বন্ধুত্ব ভাব দেখানোর ছাড়া কোন উপায় নেই।তাই বন্ধুত্ব ভাব দেখিয়ে অতর্কিত আক্রমনের উদ্দেশ্য চাপ্রে রাজ একটি চুনমাখা হস্তী মেংদিরাজকে উপহার পাঠালেন। এতে মেঙ্গদিরাজ খুবই সন্তুষ্ট হন। কিছুদিন পর হস্তীর শরীর প্রলেপ দেয়া চুনের সাদা আবরণ ধরে যেতে শুরু করলো তখন মেঙ্গদিরাজ বুঝতে পারলেন এটা আসল নয় , নকল শ্বেহস্তী। তিনি আর দেরী না করে চাপ্রেগণের উপর নির্যাতন শুরু করেন।
কথিত আছে,- উক্ত সময়ে মেঙ্গদির লোকেরা খাজানা উশুল করার নামে চাপ্রেদের গ্রামে গিয়ে পুরুষদেরকে পিছ মোড়া বেঁধে গৃহের আঙ্গিনায় ফেলে সারা রাত নির্যাতন করা হতো। আর স্ত্রীলোকদের দিয়ে মদ তৈরী করিয়ে সেই মদ পান করতঃ তাদের কে যথেচ্ছা পাশবিক অত্যাচার চালাতো। ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে গভীর অরণ্যপথে চাপ্রের অধিকাংশ লোক চট্টগ্রামে আলিকদম নামক স্থানে পালিয়ে আসেন। উক্ত সময়ে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা জামাল উদ্দীন এর অনুমতি ক্রমে ১২ খানি গ্রামের সমন্বয়ে একটি ক্ষুদ্র রাজ্য গঠন করেন। উক্ত ১২ খানি গ্রামকে বলা হয়েছিল বারতালুক। এই বারটি গ্রামের ১২টি তালুক বা দলের নাম তাদের বৈশিষ্ট্য ও আচারনের উপর রাখা হয়। যথাঃ- ১. দৈন্যাগছা, ২. মোগছা. ৩. কারবুয়া গছা, ৪. মংলাগছা, ৫. ম্মেলাংগছা, ৬. লাংগছা, ৭. অঙ্যগছা এবং অবশিষ্ট পাচঁটি তালুক বা গছা উল্লিখত গছার সাথে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলো বা পরবর্তীতে চট্টগ্রামে পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জাতিতে অন্তর্ভূক্ত হন। কিংবা পুনঃরায় আরাকানে চলে যান বলে মনে হয়।
মেঙ্গদিরাজ চাপ্রে রাজার পরমা সুন্দরী কন্যা চমিখাকে বিবাহ করেন। চমিখার চৌজু চৌপ্রু ও চৌতু নামে তিন জৈষ্ঠ ভ্রাতা ছিলো।তাদের মধ্যে চৌপ্রু শাসন করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে কখন কোথায় তা সঠিক জানা নেই। যাই হোক কনিষ্ঠ ভ্রাতা চৌতুর পুত্র ক্যাংঘরে মৈসাং (শ্রমণ) হন। যখন মেঙ্গদির অত্যাচারে স্বজন নিয়ে পালাতে শুরু করতে লাগলেন তখন মৈসাংকে গোচরীভূত করা হয়েছিলঃ-
যেই যেই বাপ ভাই যেই যেই
চম্পক নগরত ফিরি যেই
এল মৈসাং লালস নাই
ন-এলে মৈসাং কেলেস নাই।।
ঘরত থেলে মগে পায়
ঝাড়ত্ গেলে বাঘে খায়
মগে নপেলে বাঘে পায়
বাঘে ন পেলে মগে পায়।।
অতঃপর আরাকানে বসবাসরত দৈনাক নামে জাতিরা প্রাণের ভয়ে চট্টগ্রামে দিকে পালিয়ে আসেন। উক্ত সময়ে উত্তর চট্টগ্রামে স্বজাতীয় লোকের বসবাস ছিলো। তাদের মধ্যে দলপতি মোগলের অনুকুলে খাঁ উপাধি ধারণ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকায় শাসন করতেন। মোগলের অধীনে সেই সব শাসনকর্তাকে রাজাও বলা হতো। যাইহোক, আরাকান থেকে পালিয়ে আসার সময় অনেকে লাল বা খয়ের বর্ণ একটুকরা কাপড় খন্ড শরীরে পেছিয়ে মৈচাং অর্থাৎ বৌদ্ধ শ্রমণ সেজে ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং দীর্ঘপথ অতিক্রম করেন। কেননা, অক্সানামে লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। সুতরাং লাল খয়েরী বর্ণের পোশাক ও মুণ্ডিত মস্তক দেখলে তারা আক্রমণ করতো না। আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে আসা ও সব মৈসাং বেশধারী অনেকেই এভাবে থেকে যাই। চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা তাদের কে ডাকতো ‘রোলী’ (১)। পরবর্তীতে এঁরা চাকমা জাতীর একমাত্র ধর্মীয় পুরোহিত লাউরী নামে সমাদৃত হন বলে মহাপন্ডিত কৃপাচরণ মহাস্থবির কর্তৃক সম্পাদিত ও কলিকাতা থেকে প্রকাশিত ‘জগৎজ্যোতি’ (১৯১৭) পত্রিকায় উল্লেখ্য করেছেন। চাকমা রাজন্যবর্গ ও তাদের ধারাবাহিক ইতিহাসে পর্যালোচনা করলে সহজে প্র্রতীয়মান হয় যে, রাজা বিচগ্রী থেকে শুরু করে সাত্তুয়া (পাগলারাজা) পর্যন্ত যে সব রাজা ছিলেন তারা ‘রোয়াঙ্যা’ চাংমা আর ধাবানা থেকে বর্তমান সময়ে রাজা পর্যন্ত আনক্যা চাংমা নামে পরিচিত। তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি লেখক শ্রী যোগেশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার মতে চন্দ্র ঘোনার দক্ষিণ পূর্ব বা চট্টগ্রামে শঙ্খ নদীর দক্ষিণে রোয়াং বা আরাকান পর্যন্ত বসবাসকারী গণেরা ‘টংসা’ (আরাকানের ভাষায় টং অর্থ দক্ষিণ বা পাহাড়, সা অর্থ সন্তান, সা অর্থ চাংমা)। এর অর্থ এই হতে পারে পূর্বদিকে পাহাড়ি সন্তান বা পূর্ব দিকে পাহাড়ী চাংমা। আবার চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের কে বলা হতো ‘আনক-সা’। আনক্ অর্থ আরাকানিদের ভাষায় পশ্চিম। আনক-সা অর্থ পশ্চিম কুলের চাংমা। এ ব্যাপারে শ্রী অশোক কুমার দেওয়ান মহোদয়ের পুরোপুরি একমত রয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছিলেন চৌদ্দ শতকের আগে আমাদের পূর্ব পুরুষের পরিচয় ছিলো ওভাবে। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পরিচয়ে নয়। তিনি ইহা ও মন্তব্য করেন, ধাবানা রাজা হয়ে চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের স্বজাতিদের কে নিয়ে চাংমা জাতির সমাজ সংস্কার করতে গিয়ে চাকমা নামে স্বতন্ত্র করার প্রবিষ্ট হয়েছিলেন।
যতই অস্বীকার করিনা কেন, আমাদের ইতিহাসে ও ঐতিহ্য সৃষ্টি হয় আরাকান থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। আমাদের পূর্বপুরুষের আগমন ও অবস্থান দেখে আরাকানিরা হেঁয়ালিভাবে বলতে শুরু করে ছিলো চাংমাং বা চামা এবং তংসা। পরবর্তীতে বিভক্ত শব্দ দুটির মধ্যে একটি চাংমা/চাকমা, অপরটি তংচংয়্যা/তনচঙ্যা/তঞ্চঙ্গ্যা রুপান্তরিত হয়। অনেকে দাবির মতে শাক্য থেকে চাকমা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছিল। লুইনের মতে, চেইং পেংগো অর্থাৎ চম্পক নগর থেকে আগত বলে চাকমা নাম ধারণ করা হয়। বাবু সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা উপজাতি গবেষণা পত্রিকায় উদ্বৃতি মতে,- এ বিশ্বাস বংশ পরম্পরায় চলে আসলেও এ ধারণা কেবল মাত্র অনুমান। ত্রিপুড়া জাতি ‘রাজমালা’ পুস্তকের কতে “অতীতে চাকমা সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই চাকমা পরিচয়ে শব্দটি এখন ও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে ‘চাকমা’ নামে উল্লেখ পাওয়া যায়। ত্রিপুরাদের প্রাচীন রাজমালা পুস্তকে”। রাজমালার প্রথম লহড়, ৩২ পৃষ্ঠা- কৈলাস চন্দ্র সিংহ।
ক্যাপ্টেন টি, এইচ লুইনের ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর লিখিত তথ্য মতে দেখা যায়, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে যে সব উপজাতি বসবাস করে তাদের নিম্ন লিখিত নামে শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথাঃ-
১. “খ্যংথা” বা নদীর সন্তান। এরা নদীর তীর বর্তী স্থানে বসবাস করে বলে থ্যাংথা নামে পরিচিত। তারা নিঃসন্দেহে আরাকানি বংশ উদ্ভুত, প্রাচীন আরাকানি উপভাষায় কথা বলে এবং সর্বক্ষেত্রে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে।
২. “টং থা” বা পাহাড়ের সন্তান। এরা মিশ্র জাতি উদ্ভুত। এদের মাতৃভাষা বাংলা, তবে নানা ধরণের উপভাষায় কথা বলে সন্দেহাতীতভাবে খ্যাংথাদের চাইতে অশিক্ষিত। এই শ্রেণীর মধ্যে ত্রিপুরা, চাক, খ্যাং ও মার্মা তাদের গোষ্ঠীর অর্ন্তগত। খ্যাংথাদের পাশাপাশি এরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসরন করে। খ্যাংথা ও টং থা শব্দ দুটি আরাকানি ভাষার শব্দ খ্যং অর্থ নদী, টং অর্থ পাহাড় এবং “ থা” বা “সা” (Tsa)অর্থ সন্তান বা পূত্র। পাহাড়ের উপজাতীয়দের চিহ্নিত করার জন্যে এইসব জাতিগত নাম কেবল আরাকানি উপভাষা। উপজাতিরাই এভাবে ব্যবহার করে। অন্যান্য উপজাতিরা নিজস্ব পদ্ধতিতে নিজেদের বা প্রতিবেশীদের পরিচয় দেয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত পাহাড়ী উপজাতিয়দের বৃহত্তর অংশ নিঃসন্দেহে পায় দুই প্রজন্ম পূর্বে আরাকান থেকে এখানে আসে। চট্টগ্রাম কালেক্টরেটে রক্ষিত দলিত পত্রাদি ও ইতিহাস ঐতিহ্য একথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। ১৮২৪ খৃঃ বার্মা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওসময় পর্যন্ত উপজাতিয় বহু শরণার্থী আরাকান থেকে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে। উক্ত সময়ের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরা, মগ, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খ্যাং, মুরুং, চাক, খুমি ছাড়া অন্য কোন জাতি ছিলনা।
তৈনচংয়্যা/তংচয়্যা এই উচ্চারিত শব্দটি আরাকানে বা আলিকদমে বসবাসের সময় হতে শুরু হয়। প্রতীয়মান হয় যে, আরাকানে অবস্থানরত বহু চাপ্রে অর্থাৎ চাংমা নামের লোকেরা এককালে তৈনছড়ী কিংবা তৈনগাঙ এলাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৫১৬ খ্রীষ্টাব্দের দিকে তৈন সুরেশ্বরী নামে দক্ষিণাঞ্চলে রাজা ছিলেন। এই তৈন থেকে তৈনছড়ী থেকে একটি নদীর নাম হয়েছিলো বলে স্থানীয় প্রবীনদের মতামত রয়েছে। আবার ত্রিপুরা জাতির ভাষায় গাং, নদীকে তৈ বলা হয়। সুতরাং রাজা তৈন সুরেশ্বরী ত্রিপুরা ছিলেন। ত্রিপুরাদের মধ্যে এখনো রোয়াংগ্যা ত্রিপুরা ও আনক ত্রিপুরা নামে শব্দটি প্রচলন রয়েছে। যাইহোক, তৈ হতে তৈনচংয্যা দুটি উৎপত্তি একথাও পুরোপুরিভাবে ভূল নয়। কেননা, ত্রিপুরা জাতির গাবিছা সম্প্রাদায়ের মহিলাগণের পড়নের পিন্ধন ও বুক কাপড় আর তঞ্চঙ্গ্যা মহিলাগণের পড়নের পিন্ধনও বুক কাপড় সম্পূর্ণরূপে মিল রয়েছে। শ্রী মাধব চন্দ্র চাকমা রচিত “শ্রী শ্রী রাজনামা বা চাকমা রাজন্যবর্গ (১) পুস্তিকায় আংশিক উদ্বৃত মতে জানা যায়, চাকমারা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি রোয়াংগ্যা চাকমা ও অপরটি আনক্যা চাকমা।
তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা পূর্বে অভিন্ন সম্প্রাদায় ছিলো। রাজা হিসাবে ধাবানা শাসনকালে চাকমা নামে পৃথক একটি জাতির সংস্কার গড়ে তোলেন বলে উপজাতীয় গবেষণা পত্রিকা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে তার আগে তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা নামের শব্দটি কি নামে সম্বোধন ছিলো তা গবেষণায় ব্যক্ত করতে পারেননি। আমাদের এই জাতিরা পূর্বে কথা-বার্তা, গঠন প্রণালী, পূজা অর্চনা, বিষু উৎসব, জন্ম, বিবাহের চুমলাং পোষাক পরিচ্ছেদ, সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতি আসামের অহমীয়াদের প্রাচীন সস্কারের সাথে অনেকাংশে মিল ছিলো একথা প্রমানিত করেছিলেন। তঞ্চঙ্গ্যাগণ শত শত বছর আরাকানে অতিবাহিত করেছিলেন এবং তথাকার কৃষ্টি সংস্কৃতি অনুসরণ ও অনুকরণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের পূর্ব পুরুষের অতীত বৈশিষ্ট্যতা হারিয়ে ফেলেননি। বার্মা সরকার বর্তমান সময়ে তাদের কে চাকমা জাতি স্বৃতি দিয়ে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে আসছে বলে প্রত্যক্ষভাবে জানা যায়।
মোগলের অধীনে চট্টগ্রামের উপর খণ্ড খণ্ড শাসন কর্তা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে চাকমা রাজা নামে কথিত এমন শাসক হিসাবে যাঁরা পার্বত্য জাতির উপর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই ভাগ্যদেবতা বলা যায়। তাঁরা মোগলের সাথে হৃদবন্ধনের ফলে অনুকম্পা লাভ করেন এবং খাঁ পদবী ধারণ করে ইংরেজ আমল পর্যন্ত তাদের প্রভূত্ব বিকাশ পায়। যার কারণে ক্ষমতায়, সুযোগে, শিক্ষায় এমনকি দর্পেও বিস্তার পায়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পনের শতকের পর তঞ্চঙ্গ্যারা আলাদা ও পরিত্যক্ত জাতিরূপে বিবেচিত হয়। এরপর তাদের অভিযাত্রী জীবন প্রবাহ নিভে যেতে শুরু করে, এ জাতির ইতিহাস বিহিন করুণ আর্তনাদ নিরবে নিভৃত্বে মিলিয়ে যায় দূর বন পাহাড়ে।
আরাকানে ভূসিডং, রাচিডং, মংদু, ক্যকত, তানদুয়ে, মাম্রা সহ আর কয়েকটি এলাকায় চাকমা নামের তঞ্চঙ্গ্যাদের গোষ্ঠী গোজার লোক প্রাচীনকাল থেকেই বসবাস করে আসছে। চট্টগ্রামে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে কক্সবাজার জেলাধীন রামু, উখিয়াও টেকনাফ থানায় এবং বান্দরবান জেলার নাক্ষ্যংছড়ী ও আলিকদমে এখনো তঞ্চঙ্গ্যাদের পূর্ব পুরুষগণ বসবাস করে রয়েছেন। ইতিহাসের তথ্যমতে তারাই দিগ্বীজয়ী রাজা বিচগ্রী (বিজয়গ্রী), সেনাপতি রাধামন, জয়রাম ও নিলংধন নামের উত্তরসুরি বংশধর বা যোদ্ধার বংশধর ছিলেন। যুদ্ধভিযানে অগ্রসর হয়ে তারা আরাকানে ও তার আশে-পাশে বসবাস শুরু করেছিলেন। তঞ্চঙ্গ্যাদের আগমন চাকমা রাজা নামে ক্যাত ধরমবক্স খাঁ আমল পর্যন্ত বলবৎ ছিলো।
ধরমবক্স খাঁ ওসব আগমনকারীদেরকে স্বজাতি বলে গ্রহণ না করার পেছনে উক্ত সময়ে কিছু কিছু প্রভাবশালীগণের কঠিন বাধা ছিলো বলে জানা যায়। আগমণকারীদের উপর যথেচ্ছা চুরি ডাকাতি ও জুলুম করা হয়েছিলো বলে শোনা গিয়েছে। যার কারণে তারা দলবদ্ধভাবে রাইংখ্যং, কাপ্তাই, সুবলঙের উজানে, ঠেগা, শঙ্খ শেষ প্রান্তে, ত্রিপুরায়, লুসাই হিলৈ এমনকি পুনঃ মাতামুহুরী ও আরাকানে চলে যেতে বাধ্য হন। চাকমাগণ উক্ত সময়ে তঞ্চঙ্গ্যাদের কে অভিহিত করতেন পরঙী অর্থাৎ বসবাসের জন্য আগমণকারী।
ক্যাপ্টেন টি এইচ লুইন কতৃক লিখিত পুস্তক THE HILL TRACTS OF CHITTAGONG AND DWELLERS THEREIN (1869) এর মতে ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে এ জেলায় তঞ্চঙ্গ্যাদের জনসংখ্যায় ছিলো ২৮০০ জন। এদের মধ্যে অনেক বয়স্ব ব্যক্তি আরাকানি ভাষায় কথা বলতে পারে কিন্তু নতুন প্রজন্ম বৃহৎ অংশের সাথে মিশে যাচ্ছে আর এক বিকৃত ধরণের বাংলা ভাষা তাদের যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে প্রাধান্য লাভ করেছে। এরা কিন্তু সকলেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ধর্ম চুৎ হয়নি, তবে প্রকৃত পূজারী একথাও নিঃসন্দেহে বলা চলে। তিনি আরো উদ্বৃতি দিয়েছেন ১৮১৯ খৃীষ্টাব্দের দিকে চাকমা রাজা ধরমবক্স খাঁ আমলে ৪,০০০ জন তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমন করেন। এ দলের রাজা ছিলেন ফাপ্রু। স্থায়ী বসবাসের জন্য তিনি তার দলের প্রত্যেকের কাচে চাঁদা উঠিয়ে পর্তুগীজদের নির্মিত চট্টগ্রামের ‘লাল কুঠির ক্রয় করে ধরমবক্স খাঁকে উপহার দিয়েছিলেন বলে এখনো কথিত রয়েছে।
আরাকানে ভুসিডং এলাকা থেকে আগত ধল্যা চাকমা [১] অভিমত ব্যক্ত করেন, চাকমা রাজা হিসাবে ধরমবক্স খাঁন যখন রাজা হলেন এই সংবাদে খুশি হয়ে সংথাইং আমু নামে জনৈক বিত্তশালী ও দলের নেতা হিসাবে আরাকান থেকে চট্টগ্রামে আগমন করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাজা ধরমবক্স খাঁনের সাথে সাক্ষাতের আবেদন জানান। কিন্তু ধরমবক্স খাঁন তার আবেদন প্রত্যাখান করেন। নিজের ব্যক্তিত্ব ক্ষুন্ন হবার মনোভাবে তিনি আর দেরী না করে পুনঃ আরাকানের উদ্দেশ্য গমন করেছিলেন। যাত্রার সময় বীরবেশে সিঙাল (গয়ালের কিংবা মহিষের শিং এর ধ্বনি) ও ঢোলক বাজিয়ে এ অঞ্চল ত্যাগ করেছিলেন বলে কথিত রয়েয়ে।
একইভাবে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির নেতা শ্রীধন আমুর নেতৃত্বে ৩০০ শত তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমন করেন। রাজা ধরমবক্স খাঁ কে প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্য উপঢৌকন দিয়ে বসবাসের সম্মতি লাভ করেন। পরঙী নামে এই তিনশত পরিবার সবাই সচ্ছল ছিলেন এবং তারা রাইংখ্যং নদীর তীরবর্তীতে পুনঃবসতি স্থাপন করেছিলেন। সচ্ছলতার কারনে তাদের উপর বার বার ডাকাতি লুটপাট করা হতো বলে বুড়া-বুড়িদের মুখে শোনা গিয়েছে।
চাকমা রাজা ধরমবক্স খাঁর আমলে তঞ্চঙ্গ্যাদের কিছু সংখ্যক লোক অন্যত্র চলে যাবার পেছনে আরো একটি ঘটনা রয়েছে। অগ্রাহায়ন মাসের কোন একদিন তঞ্চঙ্গ্যাদের ধৈন্যা গছা আর কারবুয়াগছার লাপাস্যা দলের মধ্যে ঊয়্যা পৈ নামে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ফলে উভয় পক্ষের বহু লোক হতাহত হয় এবং রাজ দরবারে বিচারের সম্মূখীন হন। এই ঘটনার পর অনেকেই অন্যত্র চলে যান। তাদের মধ্যে গছা ভিত্তিক দ্বন্ধের জন্য বিবাহ সাদি বন্ধ হয়ে যায়।
তঞ্চঙ্গ্যারা আরাকানের অধিবাসী, আরাকান থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলো এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তারা চট্টগ্রাম থেকে আরাকানের দিকে কিছু অংশ চলে গিয়ে দৈনাক সম্বোধিত হন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ পূর্বদিকে অধিকাংশ স্থানে তাদের স্বাধীনভাবে বসবাস ছিলো। অন্যান্য উপজাতীয়দের মতো নিজস্ব আইন শাসনের মধ্যে গভীর বনাঞ্চলে জুম চাষই ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা।[ধল্যা চাকমা তঞ্চঙ্গ্যা) ৩রা জানুয়ারী ১৯৯৯ ইং রাঙ্গামাটি আসেন।বাড়ি আরাকানে ভূসিডং ইউনিয়নের মিজং গং চো এ। বয়স ৫৫ বৎসর।ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে সুপন্ডিত। বার্মা ভাষায় শিক্ষিত। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা বিষয়ে গবেষণার জন্য রাঙ্গামাটিতে আসেন। ধল্যার মতে আরাকানে তাদের বসবাস প্রায় ৭ শত বছর। রাঙ্গামাটিতে এসে চাকমাদের পোষাক, চেহারা, আচরণ দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।]
তাই তঞ্চঙ্গ্যাগণ মোগলধর্মী রাজার কিছু কিছু সামাজিক আইন মানতে রাজী ছিলোনা। যেমনঃ (ক) কোন তঞ্চঙ্গ্যা রমনীর মৃত্যু হলে তাকে পশ্চিম দিকে মাথা রেখে পুড়িয়ে ফেলা। (খ) লুরী বা লাইরী নামের ধর্মগুরু দিয়ে অন্তোষ্টিক্রিয়া কিংবা সামাজিক কর্মাদি করা। (গ)মহিলাগণের এককানে পাঁচটি করে দুই কানে দশটি ছিদ্র করা, পড়নের পিনুইনে চাবুগী রাখার পার্থক্য ইত্যাদি। সম্ভবতঃ ওসব সামাজিক কিছু কিছু নিয়ম লঙ্ঘন করেছিলো বলে চাকমা রাজা উক্ত সময়ে তঞ্চঙ্গ্যাদেরকে স্বজাতি বলে স্বীকৃতি না দেয়ার অন্যতম কারন বলা যেতে পারে।
আরাকানে অবস্থানরত চাকমাগণ(তঞ্চঙ্গ্যাগণ) শাক্য বংশের উত্তরসূরী হিসেবে তদানিন্তত জেনারেল উনু প্রতিবৎসর এ জাতির দম্পতি রেঙ্গুনে আমন্ত্রন জানিয়ে সম্বর্ধনা দিতেন। বর্তমান সময়েও আদিবাসী জাতি হিসাবে সরকার তাদের কে প্রতিবছর আমন্ত্রন জানিয়ে রেঙ্গুনে শাক্যজাতির সম্মানে সম্বর্ধনা দিয়ে আসছে বলে জানা যায়। ধল্যা চাকমা বলেন, আরাকানে অবস্থানরত চাকমা নামে পরিচিত মুগছা, ধৈন্যাগছা, কারবুয়াগছা, ল্লাংগছা, মগলাগছা এবং অঙ্যগছা ছাড়া কোন চাকমা গছা নেই। ১৯৮৫ ইং সনে লোকগণনায় দেখা গিয়েছিলো আরাকানে ৯২,৩০০ জন চাকমা(তঞ্চঙ্গ্যা) রয়েছে। ইহা ছাড়া ত্রিশ হাজারের মতো বার্মায় বসবাসের ফলে বর্তমানে তারা বার্মীজ সম্প্রাদায়ের সাথে মিশে যান। তাদের মধ্যে বুড়াবুড়িরা কিছু কিছু তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় কথা বলতে পারে, ভুসিডং নিবাসী ধল্যা এ কথা বলেন।
চাকমা রাজা ধরমবক্স খাঁ খুবই প্রতিপত্তি সম্পন্ন রাজা ছিলেন। তাঁর শাসনামলে পরবর্তী কালের রাজাগণ পার্বত্য চট্টগ্রামের তঞ্চঙ্গ্যাগণের উপর অভিন্নতা মনোভাব ও সদাচারণ এমন কি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেননি বলে জানা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন মৌজা নির্ধারন ও বন্টন করা হয় তখন পাঁচ জন তঞ্চঙ্গ্যা কে মৌজার হেডম্যান পদ দেয়া হয়েছিলো।
নিরহংকার, অসাম্প্রদায়িক ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী রাজা ভূবণ মোহন রায় শ্রেষ্ঠ করি হিসাবে শ্রী পমলাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে ‘রাজকবি’ এবং শ্রেষ্ঠ উবাগীতের ধারক বাহক শ্রী জয় চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (কানাগিংখুলী) কে ‘রাজগীংখুলী’ উপাধিতে ভূষিত করে প্রতি বছর রাজপূণ্যাহের উপলক্ষে রাজসভায় যোগ্যতার আসনে উপবিস্থ করে রাখতেন। তঞ্চঙ্গ্যা জাতির ঐসময় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি শ্রী কুঞ্জ মহাজন ও শ্রী খোক্কেয়া বৈদ্যের সাথে রাজা ভূবন মোহন রায় গভীর সর্ম্পক ছিলো বলে জানা যায়। রাজকুমার নলিনাক্ষ রায় স্বজাতির মেয়ে বিবাহ না করে জটিলাদেবী নামে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির রমনীকে বিবাহ করা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আংটি পরিয়ে দেন। এ ব্যাপারে পাত্রপাত্রি ও অন্যান্য স্বজনদের সাথে রাজা পরামর্শ করেন। কিন্তু তঞ্চঙ্গ্যাদের সাথে চাকমাগণের বৈবাহিক সম্পর্ক অসম্ভব ও অস্বাভাবিক বিধায় রাজবংশের মান সম্ভ্রম বিষয়েও বিবেচনা করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়ে যায়। নলিনাক্ষ রায়ের পর কুমার ত্রিদিপ রায় রাজা হয়ে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির ভিক্ষু শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবিরকে ‘রাজগুরু’ পদে অধিষ্ঠিত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধধর্ম উদিত হয় এবং ধর্ম বিস্তার এক অকল্পিত স্বাক্ষর বহন করে।
———————————————————–

A concise information of Dainak, Tongchangya/Tanchangya history

Best Thayet.jpg

(1) Tagaung Kingdom, Thayet, and Pyay. (2) Tayet (Earlier name was Micchagiri)

1. First Sakyan group arrived in Northern Myanmar at 850 BCE in Tagaung (Myanmar) from central India as Sakya. ( U Pe Maung Tin & G.C Luce, The Glass Palace of the Kings of Myanmar, Yangon: Unity Publication. 2008: 1. (http://www.shanyoma.org/yoma/the-glass-palace-chronicles.pdf)

2. Second Sakyan group arrived in Northern Myanmar called Tagaung around 6th Century BCE as Sakya from Northern India). (Ibid. 3)

3. Due to Chinese attack in 600 BCE the Sakyan moved from Tagaung to Micchagiri (Present Thayet, Magwe, Myanmar) at the bank of Iravati (Ayyawaddy River) from Tagaung. (Ibid:, 309)

4. In 443 BCE Sakyan founded Prome (Present Pye, Bago, Myanmar) (G. E. Harvey, History of Burma, London: Longmans Green and Co, 1926: 307)

5. In 1333-34 CE Arakan king defeated the (Thek) Sakyan king at Micchagiri (present Thayet, Magwe, Myanmar) and took them to Arakan, Western Myanmar and our Sakyan (Thek) become Dainak ( Myanmar Min Aredawbung, Danyawaddy Aredaw Bung: 14)

6. From Arakan or Sa Prye( Pye) around 1364 (it is an estimate date) CE (Common Era) went to the border of Burma and Bangladesh called Toin Gang as Dainak. (Heard from our ancestor)

Prome.gif

7. From Toin River Pha Phru led 4000 Dainak with him to Chittagong Hill Tract during Dharam Bux Khan ( Chakma King) and gave them as Toin- Gangya since they went from Toin River ( a tributary of Matamuri), in Burma-Bangladesh border. The king did not list them as Chakma but took care them as his subjects. ( Biro Kumar Tanchangya, Tanchangya Parichiti (Bandarban: Tanchangya Maha Sommilon, 1995: 21)

bandarban-map

8. The  name of “Toin-Gangya” to Tounjynyas has changed during British India in 19th Century CE. (Lewin, Thomas Herbert, The Hill Tracts of Chittagong and the Dwellers Therein: with comparative vocabularies of the Hill Dialects, Calcutta: Bengal Printing Company Limited, 1869: 62.(https://ia800205.us.archive.org/15/items/cu31924023625936/cu31924023625936.pdf)

9. In 1989, Bangladesh government identified Tanchangya as one of the indigenous communities in Bangladesh. (Rupayan Dewan; Jhum, Dhaka University)

10. Tounjynyas to Tanchangya/ Tongchangya.

Sakya> Dainak> Toin-Gangya> Tounjynyas> Tanchangya/ Tongchangya.

This is the brief history Tanchangya from Sakya to Tanchangya/Tongchangya. We trace this history as our due to our Dainak who has been living in Myanmar since immemorial time. Hope all of you will find interesting. If you find interesting share with others.