তঞ্চঙ্গ্যা জনজাতি: পাহাড় কোলে নক্ষত্ররাজি

লিখেছেনঃ কর্মধন তঞ্চঙ্গ্যা

ভূমিকা

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলার রাগুনিয়া উপজেলা, কক্সবাজার, টেকনাফ এবং উখিয়া অঞ্চলে তঞ্চঙ্গ্যাদের বসবাস রয়েছে। তঞ্চঙ্গ্যাদের আদি নাম দাইনাক, অনেকে দৈনাক নামেও ডেকে থাকেন। যার অর্থ যোদ্ধা। ইতিহাসের তথ্য মতে- তাঁরা শৌর্য, বীর্যে এবং বীরত্বে জগৎ খ্যাত ছিলেন। আরাকানে স্বাধীন দান্যাওয়াদি রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘকাল ঐ অঞ্চল স্বাধীনভাবে শাসন করেন এবং বসবাস করে এসেছেন। সময়ের পরিক্রমায় পরবর্তীতে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে এই অঞ্চলে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার তৈনছড়ি নদীর তীরে এসে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এই তৈনছড়ি থেকে তাঁরা অন্য অঞ্চলে বা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই তৈনছড়ি নদীটি তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে এখনো ঐতিহাসিক এবং আবেদনের একটি জায়গা হিসেবে রয়ে গেছে, সাথে ভালোবাসার একটি নামও। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে তঞ্চঙ্গ্যাদের অবস্থান পঞ্চম এবং শিক্ষার হার দ্বিতীয়। বাংলাদেশে তাদের আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১.০০ (এক) লাখের কাছাকাছি এবং শিক্ষার হার ৮০% এর উপরে। পরিসংখ্যান তথ্যমতে  ৪৭% তঞ্চঙ্গ্যা বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রাম। ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা, মিজোরাম সিএডিসি ও এর বাইরে ৩.৩% শতাংশ লোক বসবাস করে, অবশিষ্ট ৫০% শতাংশ তঞ্চঙ্গ্যা বসবাস করে মায়ানমার এবং অন্যান্য দেশে।

(তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের আদিবাসী, এথনোগ্রাফিয় গবেষণা, প্রথম খন্ড, ডিসেম্বর- ২০১০ খ্রি)

গছা বা গোত্র

তঞ্চঙ্গ্যারা মোট ১২ টি গছা বা দলে বিভক্ত। গছাগুলো হলো- কারবআ গছা, মো গছা, ধন্যা গছা, মংলা গছা, মেলংগছা, লাঙগছা, লাপুইসা গছা, অঙ্যা গছা, মুলিমা গছা, রাঙী গছা, ওয়া গছা, তাশী গছা। কারবআ গছা, মো গছা, ধন্যা গছা, মংলা গছা, মেলংগছা, লাঙগছা এই সাতটি গছা বাংলাদেশে বসবাস করে বর্তমানে। বাকিগুলো মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে বসবাস করছে বলে জানা যায়। আবার প্রতিটি গছায় রয়েছে উপগছা বা উপশাখা। যেমন: কারবআ গছার কয়েকটি উপগছা হলো- বউ গোত্তি, বলা গোত্তি, বাঅ-ল গোত্তি, আরয়া গোত্তি, ফারাঙচা গোত্তি ইত্যাদি। এভাবে অন্য গছায়ও ভিন্ন ভিন্ন নামে উপগছা রয়েছে।

তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা ও বর্ণমালা

তঞ্চঙ্গ্যাদের নিজস্ব, স্বতন্ত্র মাতৃভাষা এবং বর্ণমালা রয়েছে। তাদের মাতৃভাষা এবং বর্ণমালা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তঞ্চঙ্গ্যাদের মাতৃভাষার নাম “তঞ্চঙ্গ্যা” ভাষা। জনগোষ্ঠীর নামের সাথে মিল রেখে ভাষার নামটি নির্ধারণ করা হয়।

জার্মান পন্ডিত বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী, ভাষাতাত্ত্বিক ড. জি এ গিয়ারসন ১৯০৩ সনে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত “লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া” গ্রন্থে  তঞ্চঙ্গ্যা ভাষাকে পৃথক এবং সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তঞ্চঙ্গ্যা ভাষাকে আর্য-হিন্দু বা ইন্দো-এ্যারাবিয়ান ভাষার অন্তর্ভুক্ত বলে মত দেন। তিনি আরো মত দেন, তঞ্চঙ্গ্যারা ইন্দো-আর্য শাখার পৃথক একটি ভাষায় কথা বলেন যা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক ভাষার (চট্টগ্রাম অঞ্চলের) সাথে একই অন্তর্ভুক্ত হলেও তিবেতো-বর্মন কিছু বৈশিষ্ট্য তারা ধারণ করেছে। অনেকে তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষাকে ভারতীয় আর্য ভাষা পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃত বাংলা ভাষা বলে মত দেন। তাছাড়া তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষার মধ্যে প্রচুর আরাকান বা মারমা শব্দের উপস্থিতি, প্রচলন এবং প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

তঞ্চঙ্গ্যাদের ব্যবহ্ত বর্ণমালাগুলো বার্মিজ বর্ণমালার সাথে মিল রয়েছে এই মূল উৎপত্তি “মনখমের” দের থেকে। ব্রাহ্মী লিপি থেকে এই বর্ণমালার উৎপত্তি বলে অনেকে মত দেন। তঞ্চঙ্গ্যাদের বর্ণমালার নাম দাইনাক বর্ণমালা এবং বর্তমানে ব্যবহ্ত বর্ণমালার নাম ছালাম্যা বর্ণ বা ছালামী পাঠ যার অর্থ গোলাকার। বর্ণমালার সংখ্যা সর্বমোট ৩৬টি। স্বরবর্ণ ০৫ আর ব্যঞ্জনবর্ণ ৩১ টি, আরো আছে নিজস্ব সংখ্যা বা গননা পদ্ধতি।  

তাদের বর্ণমালার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো কথ্য এবং লিখিত রূপ আ-কারান্ত। তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার সবচেয়ে বড় বিশেষত হচ্ছে এর উচ্চারণ এবং কথ্যরীতি ¯স্বর কোমল, নরম এবং কর্কশ নয় শ্রবণে মধুর। শব্দ, বাক্য প্রয়োগে প্রকৃতির একটা সরলতা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ কারণ গছা বা শাখাভেদে তাদের ভাষা অভিন্ন।

পোশাক ও অলংকার

তঞ্চঙ্গ্যাদের নিজস্ব পোশাক ও অলংকার রয়েছে। গছাভেদে তঞ্চঙ্গ্যা রমণীদের পোশাকের স্বতন্ত্র বা পার্থক্য রয়েছে। তবে কারবআ গছা রমণীদের রাজকীয় এবং ঐতিহ্যবাহী পাঁচ কাপড় সবাইকে আকর্ষণ করে। রঙে, ঢঙে এবং বৈচিত্র্যে অনন্য। এই পাঁচ কাপড়গুলো হলো- পিনৈন (নির্মাঙ্গ বস্ত্র), জুম্ময়া সালুম (লম্বা হাঁটা শার্ট), মাদা কাবঙ (পাগড়ি), পা-দুরি (কোমড় বন্ধনী) এবং জুম্ময়া খাদি (ওড়না বিশেষ)। প্রতিটি পোশাকে রয়েছে নিজস্ব এবং ¯স্বতন্ত্র নকশা, ফুল এবং ডিজাইন। এসকল নকশা এবং ফুলগুলো জুম এবং প্রকৃতি থেকে নেওয়া, পাওয়া। আর ছেলেদের পোশাক সাদা ধূতি এবং লম্বাহাটা সাদা শার্ট। অলংকার হিসেবে তঞ্চঙ্গ্যারা প্রাচীনকাল থেকে নিজস্ব স্টাইল এবং ডিজাইনে অলংকার পড়ে থাকে। এক সময় রৌপ্য অলংকার ব্যবহারে প্রচলন ছিল বেশ। এখন রৌপ্য পাশাপাশি স্বর্ণ এবং অন্যান্য ধাতুর অলংকার ব্যবহার করে তাঁরা। যেমন- কানে রাইজ্জু ও জংগা, কব্জিতে বাঘোর, কুসই খারু, কিয়াইংশিক, বাহুতে তাজ্জুর, গলায় চন্দ্রহার, আলচুরি, জামছড়া, পিসিছড়া ইত্যাদি। তবে আধুনিককালে গলায় স্বর্ণ, রুপোর চেইন, আংটি, নুপুর, নেকলেস পড়ে থাকে তঞ্চঙ্গ্যা রমণীরা। পুরুষরাও চেইন, আংটি পড়ে থাকে।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জুনু তঞ্চঙ্গ্যা (হিল এক্সপ্রেস)

ঘর-বাড়ি ধরণ এবং বসতঘর

তঞ্চঙ্গ্যারা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পাহাড়ি অঞ্চল। এই পাহাড় এক সময় প্রচুর বন-জঙ্গলে ভরপুর ছিল। চারিদিকে গহীন বন। তখন এই বনে প্রচুর পরিমাণে হিংস্র বন্য পশু-পাখি বসবাস করতো। আদিবাসীরা যেহেতু পাহাড়ে এবং বনের মধ্যে বসবাস করে তাই বন্য হিংস্র পশু-পাখির সাথে এক প্রকার সংগ্রাম করে তাদের বেঁচে থাকতে হতো। মূলতঃ বন্য পশু-পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরা ঘরগুলো মাচাং আকারে মাটি থেকে একটু উচুতে তৈরি করতো। মূল ঘরের সাথে একটি ইচরও থাকতো। ইচর মূলতঃ খোলা হাওয়ায় বসে একটু বিশ্রাম নেওয়া, বসে আড্ডা দেওয়ার একটি জায়গা। একটি মূলঘরের সাথে কয়েকটি অংশ থাকে। অংশগুলো হলো- সিঙকাবা, পিনা, গুদি, বারান্দা এবং রান্না ঘর। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ঘর থাকে তঞ্চঙ্গ্যাদের। ঘরগুলো হলো-জুমঘর (জুম চাষের সময় তৈরি করা হয়। একে প্রভাস্যা ঘরও বলা হয়), ডেইরি ঘর (যেখানে ঘরের নানা জিনিসপত্র যেমনঃ চাষের নানা যন্ত্রপাতি, উপকরণ রাখা হয়), গোয়াল ঘর, ছাগল ঘর, হাসঁ-মুরগী ঘর, দারবআ ঘর (জ্বালানি কাঠ রাখার ঘর)। তবে বর্তমানে তাদের মূল ঘর তৈরিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন তাঁরা আর মাচাঙ ঘর তৈরি করে না। কারণ আগের মতো পাহাড়ে আর গভীর বন নেই, সাথে নেই হিংস্র পশুপাখিও। বাঁশ এবং শনের পরিবর্তে এখন ইট, কংক্রিট, টিন, রড, সিমেন্টের ঘর তৈরি করে তাঁরা। বর্তমান বসতগুলো মজবুত এবং দীর্ঘাস্থায়ী হয়েছে ঠিকই কিন্তু ঘরগুলো তার ঐতিহ্য এবং নিজস্বটা হারিয়ে  ফেলেছে।

ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান

তঞ্চঙ্গ্যারা মহামতি গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তাদের প্রতিটি পাড়া বা গ্রামে একটি করে  বৌদ্ধ বিহার আছে। ওখানে ভিক্ষু সংঘ আছে। তাদেরকে সকলে মিলে ভরণপোষণ করে। বুদ্ধ পূর্ণিমা তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব। এছাড়া আষাঢ়ী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, মধু পূর্ণিমা, প্রবারণা বা ফানুস উত্তোলন পূর্ণিমা তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমার পর একমাস ব্যাপি প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম দান শ্রেষ্ঠ শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাড়িতেও তাঁরা সকাল সন্ধ্যা প্রার্থনা করে।

রাজগুরু শ্রীমৎ প্রিয়রত্ন মহাথেরো (গৃহী নাম পালকধন তঞ্চঙ্গ্যা), ষষ্ঠ সংগীতিকারক রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবির (ফুলনাথ তঞ্চঙ্গ্যা), ত্রিপিটক বিশারদ ক্ষেমাঙ্কর মহাস্থবির, আর্যানন্দ মহাস্থবির, শ্রীমৎ অজিতা মহাথেরো (ধ্যান ভান্তে), ধর্মানন্দ মহাস্থবির, সুমেধানন্দ মহাস্থবির প্রমূখ বৌদ্ধ ধর্মের সাধক পুরুষ। তাঁরা হলেন তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সূর্য সন্তান এবং ধর্মীয় পন্ডিত। 

সামাজিক উৎসব

বিষু (বাংলা নববর্ষ) তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রধান এবং অন্যতম সামাজিক অনুষ্ঠান বা উৎসব। বিষু উৎসবকে তাঁরা তিনটি পর্বে পালন করে থাকে। ফুল বিষু, মূল বিষু এবং বিষু।

ফুল বিষু মূলত চৈত্র মাসের শেষ দিনের আগের দিন। মূল বিষু হলো চৈত্র মাসের শেষ দিন। আর বিষু হলো পহেলা বৈশাখ। ফুল বিষু দিনে ফুল দিয়ে বুদ্ধকে পূজা দিয়ে প্রার্থনা করা হয় এবং নদীতে ফুল পূজা দেওয়া হয় (অনেকে ফুল ভাসানোও বলে থাকেন) এই দিনে ঘর-বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয়।

মূল বিষুতে প্রায় শতপদের সবজি দিয়ে পাইচন রান্না করা হয়। এই পাইচন বিষু’র অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এবং অনুষঙ্গ। বহুপদের সবজি দিয়ে এই পাইচন রান্না হয় বলে এর ঔষধিগুনও বেড়ে যায় বহুগুণ। তঞ্চঙ্গ্যারা বিশ্বাস করে মুল বিষু’র দিনে পাইচন খেলে শরীরে যত রোগব্যাধি আছে সব চলে যায়। মূল বিষুর দিনে বয়োজ্যেষ্ঠ বা বয়োবৃদ্ধদের গোসল করানো হয়।

বিষু দিন সকলে নতুন কাপড় -চোপড় পড়ে, বুদ্ধ এবং ভিক্ষুদের জন্য আহার্য নিয়ে বিহারে যায়। প্রার্থনা করে নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, সমাজ, জাতি, দেশ এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গল এবং সুখ-শান্তির, সমৃদ্ধির জন্য। বয়োজ্যেষ্ঠদের পা ছুয়ে আর্শীবাদ নেয়। বিষু দিনে সকলে সকলের বাড়িতে বেড়াতে ঘুরতে যায়। সকলে যে যার সাধ্যমতো খাবার এবং নাস্তা-পানির আয়োজন করে থাকে। সে সময় তঞ্চঙ্গ্যারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা- সাইন্ন্যা পিঠা, বিনি পিঠা, মালি পিঠা, আলসী পিঠা, তেলের পিঠা, কলা পিঠা, কাঁকন চালের পায়েস  আয়োজন করে থাকে। সাথে মিষ্টি এবং ফলমূলও থাকে। বিষু’র মূল আনুষ্ঠানিকতা তিন দিন হলেও পুরো সপ্তাহ দশদিন এর আমেজ থাকে গ্রামে এবং পাড়ায়।

এই অনুষ্ঠান ছাড়াও নতুন ভাত খাওয়া, আর্শীবাদ অনুষ্ঠান, আহলপালানী উৎসবও হয়ে থাকে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে।

সাহিত্য চর্চা

তঞ্চঙ্গ্যাদের সাহিত্য চর্চার দীর্ঘ একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। সাধক, ব্যাধি এবং আদি কবি শিবচরণ তাদের অনুপ্রেরণা। শিবচরণের রচিত “গোসাইন লামা” তাদের সাহিত্য চর্চার অন্যতম ভিত্তি। পরবর্তীতে রাজকবি শ্রী পমলাধন তঞ্চঙ্গ্যা যিনি তঞ্চঙ্গ্যা সাহিত্যকে নতুন একটি মাত্রায় নিয়ে যান। তাঁর রচিত “ধর্ম্মধ্বজ জাতক” (১৯৩১) পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম গ্রন্থ। এছাড়া ধর্মীয় গ্রন্থ রচনার দিক থেকেও প্রথম।  ‘সত্য নারায়ণের পাঁচালী’ (১৯৩৩) তাঁর অন্যতম প্রকাশিত গ্রন্থ। তিনি “চান্দোবী বারমাস, রুত্তি বারমাস,আলস্যা মেলার কবিতা এবং বিয়াল্লিশর ভাতরাদ” বারমাস রচনা করেন। তিনিই প্রথম হস্তচালিত প্রেস স্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। চাকমা রাজ সভার সভাকবি বা রাজকবি ছিলেন তিনি।

লোকসাহিত্য

তঞ্চঙ্গ্যাদের লোকসাহিত্যর সম্ভার বেশ সমৃদ্ধ। তাদের নিজস্ব রূপকথার গল্প আছে, আছে প্রবাদ-প্রবচন। ঘুমপাড়ানি ছড়াও আছে। সাথে আছে কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক অনেক পালাও। যেমন- রাধামন ধনপুদি পালা, জুমকাবা পালা, রাইন্যা বেড়া পালা, চাদিগাঙ ছড়া পালা ইত্যাদি।

পূজা-অর্চনা

তঞ্চঙ্গ্যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও প্রকৃতির সন্তান হিসেবে তাঁরা প্রকৃতিকে সেবা-যত্ন এবং কৃতজ্ঞতা সরূপ নানা পূজা অর্চনা করে থাকে। তাঁরা মনে করে প্রকৃতির ভালোবাসা, আর্শীবাদ এবং আনুগত্য ছাড়া কারো বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতির প্রতি ভালোবাস এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটি করলে প্রকৃতি মাথা খুশি, সন্তুষ্ট হয় এবং আর্শীবাদ করে। এজন্য গাঙ পূজা, ভূত পূজা, চুমুলাঙ পূজা, মিত্তিনি পূজা,লক্ষ্মী পূজা, কে- পূজা এবং বুল পারা পূজাসহ বেশ কিছু পূজা-অর্চনা তঞ্চঙ্গ্যারা পালন করে থাকে।

জুমচাষ, জীবন এবং জীবিকা

তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রধানতম পেশা হচ্ছে জুমচাষ। জুমচাষ মূলতঃ মাল্টি এগ্রিকালচার। একই জায়গায় বহু ফসলের চাষ করা হয় এবং একটির পর একটি ফসল উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই চাষের একটি বছরের সমাপ্তি হয়। জুমচাষ মূলতঃ বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন কার্তিক মাস পর্যন্ত সময়। তবে এর দুই তিন মাস আগে থেকে জুম প্রস্তুতি অংশ হিসেবে জুমের জায়গা নির্বাচন, জুম কাটা, কাটা জঙ্গল আগুন দেওয়া এবং পরিস্কার করতে হয়। এই জুম চাষে পুরুষ মহিলা সকলে একসাথে অংশগ্রহণ করে থাকে।

এক সময় এই জুমচাষই তঞ্চঙ্গ্যাদের একমাত্র উপার্জন এবং জীবন- জীবিকার অবলম্বন ছিল। তঞ্চঙ্গ্যাদের সাহিত্য, সংস্কৃতির বিভিন্ন বস্তুগত উপাদানের সাথে এই জুম প্রত্যেক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। তবে বর্তমানে তঞ্চঙ্গ্যারা লেখাপড়া শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি চাকরি এবং ব্যবসা-বানিজ্যও করছে অনেকে। আবার অনেকে ফলজ বাগান করে আয়-রোজগার করছে। আধুনিক কৃষির সাথেও অনেকে যুক্ত। এছাড়া অনেকে গরু, ছাগল, হাঁসমুরগি, শুকর পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

জুমচাষ করতে হলে জুম কাটার স্থানে একটি জুমঘর তৈরি করতে হয়। জুমঘর মূলতঃ বিশ্রাম নেওয়ার একটা জায়গা আর কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে রাতে থাকা, জুমের নতুন ফসল মজুদ করণের উদ্দেশ্য এই জুমঘরটি তৈরি করা হয়। আর একজন জুম চাষীর তাঁর গ্রামের ঘর থেকে জুমের দুরত্ব যদি বেশি হয় সময় কমিয়ে আনা, কাজের সুবিধার্থেও এই জুমঘরটি তৈরি করা হয়। এই জুমঘর শুধু শস্য উঠা পর্যন্ত— মানে একবছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এজন্য তঞ্চঙ্গ্যারা জুমঘরকে ‘প্রবাস্যা ঘর’ও বলে থাকে।

বর্তমানে তঞ্চঙ্গ্যারা উচ্চ শিক্ষিত

কৃষকের পাশাপাশি, শিক্ষক, ব্যাংকার, আইনজীবী, এমবিবিএস ডাক্তার, ডেন্টাল, হোমিও ডাক্তার, প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী জজ, সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন এবং নন-কমিশন অফিসার, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, বিজিবি সদস্য, যুগ্ম সচিব (অবঃ), ইউএনও, উপ-সচিব, দূতাবাসের ১ম কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (অবঃ), সাংবাদিকতাসহ নানা পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন।

এছাড়া রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তির, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সদস্য, তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে থেকে এযাবত মহান জাতীয় সংসদে দুজন প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথমজন ছিলেন মালতি প্রভা তঞ্চঙ্গ্যা (এরশাদ সময়কার), আর অন্যজন হলেন জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান) সংরক্ষিত মহিলা ৩৪৮ আসনের সংসদ হিসেবে শপথ নেন। উভয়ের বাড়ি রাঙামাটি সদর উপজেলা থেকে। তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে-মেয়েরা দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে, ইঞ্জিনিয়ার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। অনেকে স্কলারশিপ নিয়েও বাইরে লেখাপড়া করছে। দেশের বাইরেও অনেকে চাকরি ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

সম্পত্তি উত্তরাধিকার

তঞ্চঙ্গ্যাদের পারিবারিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তির উত্তরাধিকার একমাত্র ছেলেরা পেয়ে থাকে। তবে ছেলে সন্তান না থাকলে মেয়েরা এর অধিকার পায়। স্বামী মৃত্যু হলে বিধবা স্ত্রী যদি পূনরায় বিয়ে না করে তাহলে স্বামী সকল সম্পত্তি সে পাবে।

সামাজিক প্রথা

তঞ্চঙ্গ্যারা সমাজবদ্ধভাবে এবং গ্রামে বসবাস করে। তাদের গ্রামের প্রধান হলেন কার্বারী। তিনি গ্রামের সকল প্রকার বিচার-আচার এবং যেকোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তিনি মৌজা প্রধান হেডম্যান এর অধীন এবং হেডম্যান সার্কেল চীপ বা রাজার অধিনে কাজ করেন। গ্রামে বা সমাজে যেকোন সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।

ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা

ঘিলা খেলা, নাদেঙ খেলা, ধুধু খেলা, কুমির কুমির খেলা, গোল মরিচ খেলা, গাত্তয়া খেলা, গাইত খেলা, তেদোই বিচি খেলা, গোয়াং খেলা, পুত্তি খেলা, আংগী খেলা, তিং খেলা,লুআলুই খেলা, গুদু খেলা,বুলি খেলা,কক্কেমা বা খাবামা খেলা, শামুক খেলা এবং তুম্বুর খেলা তঞ্চঙ্গ্যাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসকল খেলা বিশেষ করে ঘিলা এবং নাদেঙ খেলা অন্য সময় খেলা হলেও বিষু দিনে এর আকর্ষণ এবং আবেদন বহুগুণ বেড়ে যায়। তখন যুবক-যুবতীরা এক গ্রামের সাথে আরেক গ্রামের এই খেলায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তাঁরা অনেক আনন্দ মজা করে। বিবাহিত  পুরুষ এবং মহিলারাও এই খেলায় অংশগ্রহণ করে।

সংগীত, বাদ্যযন্ত্র, নাট্য সাহিত্য

তঞ্চঙ্গ্যারা ঐতিহাসিকভাবে সংগীত প্রিয়। এই ধারাবাহিকতায় তাদের অনেক ঐতিহাসিক পালা পর্ব রয়েছে। যেমন- রাধামন ধনপুদি পালা, চাদিগাঙ ছড়া পালা, জুম কাবা পালা, রাইন্যা বেড়া পালা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসকল পালাগুলো যারা সুর, তাল এবং সুকণ্ঠ দিয়ে পরিবেশন করতেন তারা হলেন চারণ কবি গিঙ্গিলি।

জয়চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজন গিঙ্গিলি আছে তঞ্চঙ্গ্যা জাতিতে। তাঁর সময়কাল এবং আজ পর্যন্ত তাঁর সমমান কোন গিঙ্গিলি কোন আদিবাসী সমাজে বা জাতিতে জন্ম হয়নি। তিনি অন্ধ ছিলেন, এজন্য তিনি কানা গিঙ্গিলি নামেও সবার কাছে পরিচিত। তাঁর আরো একটা পরিচয় ছিল তিনি রাজগিঙ্গিলি ছিলেন। পরবর্তীতে ভাগ্যধন গিঙ্গিলি, দুলামন গিঙ্গিলি অনেক সুখ্যাতি লাভ করেছেন।

ঈশ্বর চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, আদি চরণ তঞ্চঙ্গ্যা, লগ্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, অন্যতম গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে নামডাক পরিচিতি আছে তঞ্চঙ্গ্যা এবং আদিবাসী সমাজে। তাঁরা তঞ্চঙ্গ্যা জাতিকে দেশাত্মবোধক, রোমান্টিকসহ নানা ধাঁচের গান উপহার দিয়েছেন। তঞ্চঙ্গ্যা সংগীত অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের ছোঁয়ায়।

গুনী শিল্পী হিসেবে দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সুনীলা দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, সুচন্দা প্রভা তঞ্চঙ্গ্যা, এ্যানি তঞ্চঙ্গ্যা, রিনি তঞ্চঙ্গ্যা অন্যতম। পরবর্তীতে চম্পা তঞ্চঙ্গ্যা, জ্যাকলিন তঞ্চঙ্গ্যা, সূর্যসেন তঞ্চঙ্গ্যা, অমিত তঞ্চঙ্গ্যা, সুমনা তঞ্চঙ্গ্যা শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রক শিল্পী হিসেবে বুলু তঞ্চঙ্গ্যা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে অনেক নৃত্য শিল্পী রয়েছেন তঞ্চঙ্গ্যা জাতিতে। বাঁশি,ধুরূক, খিংকরং, শিঙা তঞ্চঙ্গ্যাদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। নাট্য সাহিত্যে তঞ্চঙ্গ্যারা বহুদূর এগিয়েছে। পমলাধন তঞ্চঙ্গ্যা, কার্ত্তিক চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, রাজগুরু অগ্রবংশ মহাস্থবির, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা তাদের মধ্যে অন্যতম এবং তাঁরা তঞ্চঙ্গ্যা নাটকের পুরোধা। রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যার হাত ধরে আধুনিক তঞ্চঙ্গ্যা নাটক আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে। তাঁর হাত ধরেই- “বর পরঙ, মন উকুলে, রত্নমালা” নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয়েছে। “চানপুদি” নামে তাঁর একটি শিশু চলচ্চিত্রও ঢাকা শিশু চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করে দর্শক এবং সুধীমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বিবাহ পদ্ধতি

তঞ্চঙ্গ্যা সমাজে বিয়ে সাধারণত দুইভাবে হয়। অনুষ্ঠান করে বিয়ে এবং পলায়ন করে বিয়ে। অনুষ্ঠান করে বিয়ে করাকে ‘সাঙা’ বিয়ে বলে আর পালিয়ে করাকে ‘ধাবারা’ বিয়ে বলে।

সাঙা অনুষ্ঠানে সাধ্যমতো আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পাড়া প্রতিবশীকে আপ্যায়ন করে খাওয়ানো হয়। আর ধাবারা বিয়েটে এসব কোন কিছুই হয় না। এই ধাবারা বিয়েটে অনেক সময় ঘরের সকল সদস্যদের (মা, বোন জানলেও) জানার সুযোগ থাকে না। তবে কনে এবং বর বিষয়টি অবগত থাকে, সাথে তাদের কিছু বন্ধু-বান্ধব।

ধাবারা বিয়ের জরিমানা হিসেবে বর পক্ষ কনে পক্ষকে শুকর বা সামান্য কিছু টাকা দিতে হয় যুব সমাজ এবং সামাজিক দাবী হিসেবে। বিয়ে নিয়ে কিছু ধরাবাঁধা এবং সামাজিক নিয়ম রয়েছে তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে। যেমন: নিজের আপন ভাই-বোনের মধ্যে, মাসি-পিসি, চাচা-চাচিকে বিবাহ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং সামাজিকভাবে অবৈধ একটি কাজ। আপন চাচাত ভাইবোনের মধ্যেও বিয়ে অবৈধ। মামা, পিসি, মাসিত ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ করা সামাজিকভাবে স্বীকৃতি আছে।

এই একই সম্পর্কে বিধবা মেয়ে বা বিপত্নীকেও বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে বর কনে উভয়ে উভয়কে নিয়ম-রীতি অনুযায়ী কিছু অলংকার দিতে হয়। তবে কি পরিমাণ দিতে হবে তার কোন নিয়ম নেই, দাবীও নেই। আর এর বাইরে বর কনে উভয়ে উভয় পক্ষ থেকে কোন কিছু দাবী করার পারিবারিক, সামাজিকভাবে দাবি করার কোন সুযোগ এবং নিয়ম নেই। দাবি করা ন্যায় এবং ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক একটি বিষয় যা সামাজিক অপরাধ হিসেবে গন্য হয়।

তঞ্চঙ্গ্যা সমাজ এবং জাতিতে ভিন্ন জনগোষ্ঠী থেকে বিবাহ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। তাঁরা বিশ্বাস করে এতে জাতি, সমাজ এবং পরিবারের শৃক্সখলা নষ্ট হয়। জাতির অস্তিত্ব এবং সংস্কৃতি সংকটের মধ্যে পড়ার একটি সম্ভাবনা বা আশঙ্কা তৈরি হয়।

অবস্থান ও বসতি

তঞ্চঙ্গ্যারা রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, জুরাছড়ি, কাউখালী উপজেলায় বসবাস করে। বান্দরবান জেলার মধ্যে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, লামা, নাক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম উপজেলায় বসবাস করে। চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে রাঙ্গুনিয়া আর কক্সবাজার জেলার মধ্যে টেকনাফ, উকিয়া উপজেলায় তাদের বসবাস রয়েছে।

ভারতে মিজোরাম, ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা, আগরতলা আর মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বসবাস রয়েছে। এছাড়া আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তঞ্চঙ্গ্যারা স্থায়ী বা চাকরিসূত্রে বসবাস করছে।

নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি

এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্র বা পদ্ধতির সাথে পরিচয় হওয়ার আগে তঞ্চঙ্গ্যাদের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে পরিচয় ঘটে। বৈদ্য, কবিরাজ এবং কালেভদ্রে ভান্তেরা একজন চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করেন। বনজ গাছ-গাছড়া, বাকল, শেকড়, লতাপাতা, ফলমূল দিয়ে বানানো বনৌষধি নানা রোগ নিরাময়ে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পালন করে। বৈদ্য, কবিরাজগণ ঔষধের সমস্ত তালিক বা তালিকা নিজস্ব খাতায় বা নোটে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বৈদ্যরা বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্র, বান-টনা, আঙ ডালি, পূজা কর্ম দিয়েও নানা রকম চিকিৎসা করতো। তাছাড়া তখনকার সময়ে চিকিৎসায় একমাত্র সম্বল ছিল এই বৈদ্য এবং কবিরাজরা। বর্তমান সময়ে এসেও আদিবাসী সমাজে বৈদ্য, কবিরাজের চিকিৎসা পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।

নারীর অবস্থান

আদিবাসী জনগোষ্ঠী মতো তঞ্চঙ্গ্যা নারীরাও অনেকটা স্বাধীন জীবন-যাপন করে থাকেন।

তঞ্চঙ্গ্যা নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমভাবে মিলেমিশে জুম, ক্ষেতে খামারে কাজ করে থাকেন। তবে গৃহস্থালি কাজগুলো মেয়েরা বেশির ভাগ সময় করে থাকে, পুরুষরাও সহযোগিতা করে। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমমর্যাদা ভোগ করলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের পরেই তাদের অবস্থান।

নারীরা পিতা-মাতার সম্পত্তির ভাগ পায় না। বিয়ের পর সকল প্রকার ভরণপোষণ স্বামীর নিকট থেকে সে পেয়ে থাকে। যদি স্বামী দিতে অপারগ করে বা অস্বীকৃতি জানাই তাহলে সে চাইলে গ্রাম প্রধান বা কার্বারী নিকট আইনগত আশ্রয় চাইতে পারে। স্ত্রীর অমতে স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করলে প্রথম স্ত্রী সতীনের সাথে একসঙ্গে বসবাসে অসম্মতি জানালে সেক্ষেত্রে স্বামী ভিটায় বা বাবার বাড়িতে অবস্থান কালীন সকল ভরণপোষণের দায়িত্ব সে স্বামী থেকে পাবে। যদি সেও দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করে সেটি আর পাবে না।

বর্তমানে এসে সময় এবং যুগ পাল্টে গেছে অনেক। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরি করছে এবং তাঁরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হচ্ছে। তাঁরাও এগিয়ে যাচ্ছে নিজেদের যোগ্যতায়। তাঁরা নিজের পছন্দ অপছন্দের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। তাঁরাও পরিবারকে সুন্দরভাবে গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে এবং রাখছে। এটি সৃষ্টি মানবজাতির জন্য সুন্দর একটি দিক।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ

মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি এবং সকল পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। দেশকে স্বাধীন এবং শত্রুমুক্ত করাই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যেক্ষ পরোক্ষভাবে তঞ্চঙ্গ্যারাও অংশগ্রহণ করে। দেশের জন্য নিজের জীবন এবং পরিবারকে উৎসর্গ করে দিয়েছে তাঁরা। সমতল থেকে রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মির অত্যাচার নির্যাতনে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে আসা শত শত বাঙালি পরিবারকে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় এবং খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। অসুস্থ রোগীকে নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলে। নাম না জানা অনেক তঞ্চঙ্গ্যা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও অনীল চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা একজন সরকারি গেজেটেড এবং ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ি কাপ্তাই কাপ্তাইয়ের উপজেলার ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার আগুনিয়াছড়া গ্রামে। তিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য  যুদ্ধ করেছেন।

শ্রীমতি গনমালা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বামী- ভাগ্যধন তঞ্চঙ্গ্যা, বাড়ি রাজস্থলী উপজেলাধীন গাইন্দ্যা ইউনিয়নের তাইতং পাড়া যৌথ খামার গ্রামে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনা। দেশের জন্য তাঁরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তিনি।

স্বভাব এবং সামাজিক মূল্যবোধ

তঞ্চঙ্গ্যারা স্বভাবে শান্ত, নম্র এবং ভদ্র। তাঁরা প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এবং সামাজিক মূল্যবোধ ধারণ, পালন ও আচরণ করে। অপরের সাথে রাগ, বদমেজাজ স্বরে কথা বলে না। কথা বলার মধ্যে শালীনতা বজায় রেখে চলে। স্বভাবে একঘেয়েমিতা নেই। কথায় কথায় মুখে অসুন্দর শব্দ, বাক্য প্রয়োগ করে না এবং করা থেকে বিরত থাকে। চেহেরার মধ্যেও একটা প্রকৃতিকতার আবেদন আছে।

সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালন

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রাপ্তির সহজলভ্যতার কারণে অন্যান্য চিকিৎসার মতো নবজাতক জন্মদান এখন নিরাপদ এবং সহজ হয়ে উঠেছে।

একসময় তঞ্চঙ্গ্যা তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠী সন্তান জন্মদান ভগবানের কৃপা এবং প্রকৃতির উপর নির্ভর ছিল সকলে। তখন গ্রামে “অসা বুড়ি”(ধাত্রী) নামে একজন বয়স্ক মহিলা সন্তান জন্মদানের সকল প্রক্রিয়ার সাথে থাকতেন। তখন সাবান, ব্লেড বা ছুরি কাঁচি পরিবর্তে বাঁশের ধারালো কঞ্চি দিয়ে কাটাছেঁড়া কাজটি সম্পূর্ণ করা হতো এবং ভুত্তোয়া লতা নামক একধরনের লতার কান্ড দিয়ে সাবান বা পরিস্কারের কাজটি ছাড়তে হতো। নিমপাতা সিদ্ধ করে সন্তান প্রস্রবের স্থানটি পরিস্কার করা হতো।

সন্তান জন্মদানের সাত দিনের মাথায় একটি অনুষ্ঠান করা হয়, যা ‘কসুই পানি লনা’ নামে পরিচিত। এই অনুষ্ঠান না হওয়া আগ পর্যন্ত নতুন মাকে ঘরের সকল কাজ করা থেকে বিরত রাখা হয়। মূলতঃ এসময় নতুন মা শারীরিকভাবে খুব দুর্বল থাকেন। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি ঘরের কাজ পুনরায় করার অনুমতি পান। এই সময় অসাবুড়িকে  কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ স্বরূপ কিছু নতুন কাপড়চোপড় উপহার দেওয়া হয়। তাঁকে যত্ন করে আপ্যায়ন করা হয়। গ্রাম প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দাওয়াত করা হয় এসময়। তাঁরাও নতুন অতিথি এবং মায়ের জন্য নানা উপহার নিয়ে আসেন। পরবর্তী ঘরের সদস্য সকলে মিলে জন্মবার এবং পঞ্জিকা দেখে সন্তানের জন্য সুন্দর একটি নাম রাখেন।

ছয় মাস পর বিহারের বড় ভান্তের হাত দিয়ে এবং আর্শীবাদ নিয়ে বা ঘরের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যের হাত দিয়ে তাঁকে মুখে প্রথম ভাত খাওয়ানো হয়।

মৃত্যু, সৎকার এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা

মৃত্যুর পর ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী তঞ্চঙ্গ্যারা মৃত ব্যক্তিকে দাহ করে। দাহ করার আগে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো হয়। এরপর “বিয়াঘর” তৈরি করে মৃত ব্যক্তিকে ঐ ঘরে রাখা হয় (বিয়াঘর মূলতঃ শ্মশান যাত্রার আগ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তিকে রাখার অস্থায়ী ঘর)

পরবর্তীতে বাঁশ, তার, দড়ি বা রশি এবং নানা রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি করা মন্দির সাদৃশ্য ‘প্যারাসাইট’ নামক একটি প্যাটিকায় আবদ্ধ করে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং জ্ঞাতিগোষ্ঠী থেকে অশ্রুজলে বিদায় নিয়ে জগত সংসারের সকল আনুষ্ঠানিকতা মেনে এবং ছেড়ে কাঁধে বহন করে চিদাকলায় (শ্মশান) নিয়ে যাওয়া হয়।

ছেলেদের শ্মশান সাজানো হয় পাঁচ ধাপ/টাক দিয়ে আর মেয়েদের সাত ধাপ বা টাক গাছ দিয়ে। নদীর গতিপথ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির মাথা এবং পা কোন দিকে হবে সেটি নির্ণয় করা হয়। নদী বা ছড়া যদি উত্তর থেকে দ¶িণ দিকে নেমে যায় তাহলে মৃত ব্যক্তিকে শ্মশানে শুয়ানো হবে মাথা উত্তর দিকে করে আর পা দক্ষিণ দিক করে। দাহ করার পরদিন পরিবারের এবং আত্মীয় -স্বজন গিয়ে মৃত ব্যক্তির ধাতুগুলো(হাড়) খুঁজে নিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করে নদীতে বিসর্জন বা ভাসিয়ে  দেওয়া হয়। নদীতে গিয়ে ঘাটের উভয় পারের টাকা-পয়সাও দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তি যেন বিনা বাঁধায় তাঁর সুপথে গমন করতে পারে।

দাহ করার সাত দিনের মধ্যে ভালো একটি দিন দেখে সাপ্তাহিক সংঘদানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় মৃত ব্যক্তির আত্মা সুখ শান্তি এবং সদ্গতি কামনা করে। সাপ্তাহিক এই অনুষ্ঠানকে তঞ্চঙ্গ্যারা ‘সাতদিন্যা’ বলে। এই দিনে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্য “চেরাগঘর” নামে একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। তঞ্চঙ্গ্যারা বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর তাদের পরম আত্মীয় এবং পরিবারের সদস্য গৃহহীন যেন না থাকে এই উদ্দেশ্য ঘরটি তৈরি করে দেওয়া হয়। সাথে মৃত ব্যক্তিকে খাবার দেওয়ার জন্য তৈরি করে দওয়া হয় “তামাঙ-ত ঘর”।

সংঘদানে ভিক্ষু সংঘকে ফাঙ বা দাওয়াত করা হয় সাথে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব এবং পাড়া- প্রতিবেশীকেও নিমন্ত্রণ করা হয়। সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা হয় সকলকে। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্য আয়জন করা সকল খাবার রাত বারোটার মধ্যে শেষ করে ফেলতে হয়। যদি থেকে থাকে এগুলো নদীতে পেলে দিতে হয়। কাউকে দেওয়া যায় না। ছোট বাচ্চাদের উক্ত সংঘদানে অংশগ্রহনে নিরুৎসাহিত করা হয়, মৃত ব্যক্তির পরিবারের ছোট সদস্য ছাড়া।

সংঘদান অনুষ্ঠানকে সুন্দর করে তোলার জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক এবং বস্তুগত উপাদান দিয়ে সহযোগিতা করা হয় আত্মীয়- স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পাড়া প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে। এই সহযোগিতা তঞ্চঙ্গ্যারা নিজেদের সামাজিক এবং নৈতিক একটি দায়িত্ব বলে মনে করে। মৃত দুধের শিশুকে দাহ করা হয় না, তাঁকে কবর বা দাফন করা হয়। এই কবরকে ‘পআকাবা’ বলে।

উপসংহার

তঞ্চঙ্গ্যারা নিজেদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। নিজেদের সংস্কৃতিকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। তাঁরা আরো বিশ্বাস করে নিজেদের সংস্কৃতিকে রক্ষায় নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে।

জুম, পাহাড়, ছড়া, ঝিরি -ঝর্ণার মতো অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃপ্রেমে নিজের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির উপাদানসূহ সকলের সাথে বিনিময়ের পাশাপাশি অন্যের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা রেখে এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিনগুলো। দেশ, জাতির সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনে এবং সংকট প্রশ্নে একসাথে কাজ করতে চাই সকলের সাথে মিলেমিশে হাতে হাত রেখে।

লেখকঃ “পহর জাঙাল” প্রকাশনার স্বপ্নদ্রষ্টা, সম্পাদক, প্রকাশক, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, নাট্যকার ও ভাষা গবেষক”

The first Tanchangya artist Mr. Ratikata Tanchangya

Roti kanta

The most popular artist in Chittagong Hill Tracts is Mr. Rati Kanta Tanchangya. He is the son of Shikol Chand Tanchangya and a grandson of the richest man named Mr. Nikunja in Tanchangya community, born on 23rd of month Jesta in 1347 Bengali Year (June 6,1941) at the bank of Rainkyong,  Boradam village under the sub-district of Bilaichhury, Rangamati, Bangladesh. He is father of three sons namely, Dibyendo Tanchangya, Anupom Tanchangya, and Dipankar Tanchangya. During his service he worked in the department of agricultural expansion. 

Recognition 

Due to his dedicated service at Fine Art, he was awarded as Great Artist from the President of Bangladesh Ziaur Rahman on 1st January, 1981. Moreover, according to the examination of Bangladesh board, he has passed the examinations Sutta, Vinaya, and Abhidhamma. In 1978 he received the title of Visvakarma  from Venerable Sadhanananda (Vana Bhante). He is also recognized as a song composer of Bangladesh Radio Station in Rangamati  in Tanchangya, Chakma and Bengali.  In 1990 through Raja Devashis Rai, he was awarded as Artist and Writer in Gauhati, India. 

Contribution and Responsibilities 

Ratikanta Tanchangya introduces himself not as an artist rather as an art admirer. In 1979, he solely established the Charukola Akaedmy (Fine Art Academy), first academy in Chittagong Hill Tracts. This is the first Fine Art Academy in three Hill Districts that has established without any support  from government.  He has been supervising Rangamati Charukala Academy (Academy of Fine Arts) since 1979. Although in Chittagong Hill Tracts there were Jumma artists, practiced art before him but he was the first  person who took an initiative of teaching art to Jumma children. He not only practiced art but also had a vision of making like minded people in Jumma community. His success was indicated by many national and international prizes won by his students, while they were learning and practising art at his institute. His institution is not only changing and forwarding Jumma society, introducing art to Jumma culture but also bringing international fame for the country.  Besides his artist passion, he is also a prolific writer  and a regular columnist on Tanchangya history and culture in Bengali newspaper. 

On the one hand Mr. Ratikanta is an artist, on the other he is a song writer and poet. In 2007 during the caretaker government of Fakhruddin Ahmed, he chaired  a neutral person, member of Rangamati District Council. He is currently acting as the Chief and Principal of the Fine Arts Academy (Charu Kola Akademy) in Rangamati.

A writer being Artist

While painting arts, he also writes books. Every one of his books is well-acclaimed  and informative. His published books in Bengali are:

  1. Painting (চিত্রা) ( a book on fine art)- 1986.
  2. An Introduction to Tanchangya (original manuscript)- 1995.
  3. Tanchangya Tribe-2000
  4. Song Book (গীত পোই) in Tanchangya, Chakma and Bengali- 2008.
  5. Fine Art Practice- 2011
  6. Autobiography- 2012
  7. An Illuminated Tanchangya Buddhist Monk-2018.

He keeps writing time to time until now. He is not only a great person to Tanchangya tribe, but for the whole Chittagong Hill Tracts. His contributions towards Tanchangya tribe and the whole indigenous communities worth to be acknowledge.

তঞ্চঙ্গ্যা জাতির আদ্যেপান্ত

তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎপত্তি, বিকাশ এবং বর্তমান সম্পর্কে কোনো তঞ্চঙ্গ্যার ইতিহাস রচনাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। কেবলমাত্র চাকমা জাতির ইতিহাস গ্রন্থে তঞ্চঙ্গ্যাদের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়। তাও অনুমান নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে চাকমা জাতির একটি শাখা হিসেবে তঞ্চঙ্গ্যাদের পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে। চাকমারাও তঞ্চঙ্গ্যাদেরকে চাকমার একটি শাখা হিসেবে স্বীকার করে। এমনকি আসল বা মূল চাকমাও বলে থাকে। কিন্তু আশ্চার্য্যের বিষয় এই যে, চাকমাদের যে গোজা গোষ্ঠী রয়েছে সেসব গোজা গোষ্ঠীর সঙ্গে তঞ্চঙ্গ্যাদের বারোটি গোজা বা গোষ্ঠীর নামের সঙ্গে কোনো মিল নেই। চাকমা জাতির ইতিহাস রচয়িতারা তাদের রচিত ইতিহাসে এমনকি আধুনিক চাকমা লেখকরা তাদের চাকমাজাতি বিষয়ক রচনায় তঞ্চঙ্গ্যাদের গোজা গোষ্ঠী বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানাদির নাম চাকমাদের গোজা গোষ্ঠী বা আচার অনুষ্ঠান বলে উল্লেখ করেন না। যদি চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা একই জাতিভুক্ত বলে স্বীকার করা হয়। হিন্দুরা বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম বলে দাবি করেন, তাই তথাগত বুদ্ধকে হিন্দুদের অবতার (দশম অবতার) রূপে পূজা করেন। যদিও হিন্দুধর্ম আর বৌদ্ধধর্ম দুইটা দুই মেরুতে অবস্থান করছে। চাকমা জাতির উত্থান পতন, জয় পরাজয়, আশা আকাঙ্খা, সুখ দুঃখ, ব্যথা বেদনা, অভিযান অগ্রগতি বা সমবৃদ্ধির বিবরণীর সঙ্গে তঞ্চঙ্গ্যাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। কেবলমাত্র ইতিহাসের শো’কেসে তঞ্চঙ্গ্যাদের পুতুল বানিয়ে আবদ্ধ করেই রাখা হয়েছে।

ইতিহাস ও অবস্থান

তঞ্চঙ্গ্যা নামের দৈংনাকেরা বৌদ্ধ এবং তারা মায়া নদীর (মায়ু) উর্ধ্বভাগে বসবাস করেন। তাদের ভাষা বিকৃত বাংলা। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চাকমা এবং দৈংনাকদের একসঙ্গে ইতিহাসে উল্লেখ দেখা যায়। ধর্ম এবং ভাষার সাদৃশ্য থাকাতে উভয় জাতিসত্ত্বার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও মৈত্রী থাকার কথা ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। আরাকানবাসীদের সঙ্গেও দৈংনাকদের কোনোরূপ দ্বন্দ ও সংঘাত ছিল না। অন্ততঃ ইতিহাসে কোনো দ্বন্দের উল্লেখ নেই। আরাকান ও উচ্চব্রহ্মে অপরাপর মঙ্গোলীয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জাতিগোষ্ঠীর দৈংনাকরা অন্যতম তা প্রাচীন আরাকান ইতিহাসে পাওয়া যায়। যেমন- ‘প্রাচীন আরাকান রাজ্য ছিল মোঙ্গল, তিব্বত ব্রহ্ম জনগোষ্ঠী ও মুরুং, খুমী, চাক, সিন, সেন্দুজ, ম্রো, খ্যাং, ডইনাক, মারুমিউ প্রভৃতি কিরাত উপজাতি অধ্যুষিত দেশ।’

ধর্ম

দৈংনাকরা যে বৌদ্ধ তা ‘হিসটোরি অব বার্মা’ রচয়িতা তৎকালীন আরাকান বিভাগের কমিশনার ফেইরী উল্লেখ করেছেন। তাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্ম শাস্ত্র ত্রিপিটক ছিল। চাকমারাও বৌদ্ধ। শত অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হলেও তারা আরাকান ত্যাগের সময় বৌদ্ধ ধর্মকে ত্যাগ করেনি। তাদের পরবর্তী ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তারা আরাকান ত্যাগ করার প্রাক্ক্বালে ধর্ম‌শাস্ত্র সঙ্গে বহন করেছিল। কিন্তু মূল ত্রিপিটক দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অথবা তাদের কাছে না থাকাতে তারা মূল ত্রিপিটক সঙ্গে নিতে পারেনি। দৈনন্দিন কাজে বা মৃত্যু, বিবাহ প্রভৃতি সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারোপযোগী প্রয়োজনীয় সূত্র মূল ত্রিপিটক হতে লিপিবদ্ধ করে নেয়।

বসবাস

কথিত আছে চাকমারা চট্টগ্রাম, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করলে আলীকদম ও আরাকানের বহু দৈংনাক স্ব-জাতীয় বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে চাকমাদের সান্নিধ্যে বসবাস করার উদ্দেশ্য তত্র অঞ্চলে চলে আসে। আলীকদম থেকে কিছু দৈংনাক নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও বর্তমান কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। অদ্যাবধি সেই সব জায়গায় তারা বসবাস করছে। উত্তরদিকে আসার পথে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, হোয়াকক্ষ্যং, রাজবিলা, শুকবিলাস, বাঙ্গালহালিয়া, নারানগ্রী, কাপ্তাই উপত্যকা অঞ্চল, নোয়াপতং, রাইংখ্যাং উপত্যকা সম্পূর্ণ অঞ্চল, হোয়াগ্গা, বড়াদম, ঘাগড়া, রইস্যাবিলি এসব অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে।

চাষাবাদ

তখন সমতল জমিতে কৃষি পদ্ধতি সবেমাত্র আরম্ভ হয়। অধিকাংশ প্রজারাই জুমচাষের উপর নির্ভরশীল ছিল। দৈংনাকরাও জুমচাষী ছিল। চাকমা রাজ সরকারের জুম তৌজিতে তাদেরকে চাকমা উল্লেখ না করে তৈনটংগ্যা (অধিকাংশ আলীকদমের তৈনছড়ি থেকে আগত বলে) নামে উল্লেখ বা তৌজিভুজ করা হল। তৈনটংগ্যা শব্দটি ক্রমে ক্রমে ‘তঞ্চঙ্গ্যা’ এই লিখিত রুপ লাভ করে।

 

লিপিকা রানী বড়ুয়া 
ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

ডেইলি বাংলাদেশ/জেএমএস

https://www.daily-bangladesh.com/%E0%A6%A4%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4/76473

ভাগ্যের সন্তান তঞ্চঙ্গ্যাগণ

লেখকঃ মিলিন্দ তনচংগ্যা

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতে চতুর্থ স্থানের অধিকারী তঞ্চঙ্গ্যাগণ সর্বাধিক ভাগ্যবান বলে মনে করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাপর জনগোষ্ঠী সমূহের শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম ও আর্থসামাজিক যে অগ্রগতি সাধন হয়েছে, জনসংখ্যায় কম হলেও তঞ্চঙ্গ্যাগণ সে অগ্রগতির মানদণ্ড অর্জন করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, তঞ্চঙ্গ্যাদের কতিপয় ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় ও সাহিত্য ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কোন ব্যক্তি বা জাতি যখন নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, সমগ্র বিশ্বের আলোকে নিজেকে দেখতে আরম্ভ করে তখনই তার অন্তরে জাগরণ শুরু হয়। জাগরণের উজ্জ্বল রেখা বেয়ে সমগ্র বিশ্বের মঙ্গল উৎসব তার মাঝে সমাবিষ্ট হয়। সেই ব্যক্তি বা জাতি সার্থক হয়। পরম ভাগ্যবান।

তঞ্চঙ্গ্যার সুযোগ্য সন্তান শ্রী ফুলনাথ তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু জীবনে উপসম্পদা গ্রহণ করতঃ শীমৎ অগ্রবংশ ভিক্ষু (বর্তমানে মহাস্থবির) নামে বার্মায় (বর্তমানে মায়ানমার) বৌদ্ধ দর্শন ও ত্রিপিটকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার্মায় ১৯৫৪ সাল হতে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ বৌদ্ধ সংগীতি (আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধর্ম মহাসম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয় এবং শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবির অন্যতম সংগীতিকারক (ধর্ম বিশ্লেষক) হিসেবে যোগদান করেন। সেই সময় স্বধর্মপ্রাণ চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তাঁকে চাকমা রাজগুরু রূপে বরণ করার জন্যে স্বদেশে আমন্ত্রণ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিদর্শন ও পালি ত্রিপিটকে এম. এ. ডিগ্রি গ্রহণ করে ত্রিপিটকাচার্য্য অভিষিক্ত হন।
উল্লেখ্য যে, তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণের তিন মাস পরে তাঁর ধর্ম বিনয় রাজগৃহে সপ্তাপর্নী গুহায় অরহৎ মহাকাশ্যপ স্থবিরের নেতৃত্বে পাঁচশত অরহৎ কর্তৃক সংকলিত বা সংগৃহীত হয়। ইহা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে প্রথম সংগীতি নামে অভিহিত হয়েছে। এভাবে মাঝে মাঝে সম্মেলনী বা সংগায়নের মাধ্যমে তথাগত বুদ্ধের ধর্ম ও বিনয় পরিশুদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়ে আসছে। এযাবৎ ছয়বার এরূপ ধর্মসংগীতি বা ধর্ম সংগায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এই ধর্ম মহা সম্মেলনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এরকম গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম মহাসম্মেলনীর অন্যতম সংগীতিকারক হিসেবে যোগদান করে শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবির তঞ্চঙ্গ্যাগণকে ধন্য ও গৌরবান্বিত করেছেন। তাঁকে ঐ সম্মেলনে তৎকালীন পাকিস্তানী বৌদ্ধদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সদ্ধর্মপ্রাণ চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় সর্বাত্মক সহয়তা প্রদান করেন। বিশ্বের ক্ষুদ্রতর বৌদ্ধ সম্প্রদায় চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম সংগীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে সমগ্র বিশ্বে নিজেদের মর্যাদা সুমন্নত করেছে। দ্রষ্টব্য: The Chattha Sangayana Souvenir Album. পৃষ্ঠা – ৮৫।
বিংশ শতাব্দী তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য প্রথম সৌভাগ্য বহন করে এনেছে। তঞ্চঙ্গ্যাগণ ভাগ্যের সন্তান। কেননা, এত ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী অতিস্বল্প সময়ে সমগ্র বিশ্বের সদ্ধর্ম পুজারীর শুভেচ্ছা ও মৈত্রী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবির এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরের জন্য আত্বনিয়োগ করেন এবং অচিরেই অনেক চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা যুবক উপসম্পদা গ্রহণ করেন এবং চাকমা গ্রামে ক্যং বা বিহার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
উল্লেখ্য যে, তৎপূর্বে চাকমা সমাজে আগরতারা অবলম্বন করে লুরীগণ বিবাহ অনুষ্ঠান, মৃতদেহের সৎকার ও অন্ত্যেষ্টী ক্রিয়া, ভাতদ্যা প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় অনষ্ঠানাদিতে পৌরহিত্য করত। বৌদ্ধধর্মের মূল আদর্শ অনুসারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বিষয় লোকে একদম বিস্মৃত ছিল।
চাকমা রাণী কালিন্দী ১৮৫৬ সালে থেরবাদী বৌদ্ধধর্মের সংঘনায়ক শ্রীমৎ সারমেধ মহাস্থবিরকে রাজগুরু পদে বরণ করে এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের পূনর্জাগরন এনেছিলেন। পরবর্তীকালে একশত বৎসরের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম পরিহীন হয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে সদ্ধর্ম প্রবর্ধক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবিরকে রাজগুরু পদে বরণ করে পুনরায় এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম পূনর্জাগরণের মহতী উদ্যোগ নেন। ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবিরকে মহাস্থবির পদে বরণ করা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং নেপালের রাষ্ট্রদূত শ্রী কিস্তিনিধি কিস্তা (পরবর্তীকালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী) সস্ত্রীক যোগদান করেন। রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবিরের প্রচেষ্টায় এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের পূনর্জাগরণ কি আশ্চার্য্যজনকভাবে সম্পন্ন হয় চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় তাঁর Buddhist Revival in the Chittagong Hill Tracts শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রবন্ধে চিত্তাকর্ষকভাবে সুন্দর বর্ণনা প্রদান করেছেন: Kalindi’s reforms had far reaching effects not only on the Chakmas but also on the Marmas and Buruas. Since her time, Buddhism has gradually advanced at the expense of animist and other non-Buddhist practices. However, the number of Chakma monks and monasteries in the Chakma country were still far-smaller than in the case of the Barua and the Marma. The great change in the Buddhist practices of the Chakmas came in the 1950’s almost exactly a hundred years after Rani Kalindi and Sangharaja Saramedha. In 1958, at the invitation of the Chakma Raja Tridiv Roy, the venerable Agravamsa Thera (now Mahathera) came to Rangamati to be appointed the Chakma Raj Guru. In 1959, “The Parbatya Chattagram Bhikkhu Samiti”, was established under the Rajgurus leadership and the number of monasteries. These effects were felt even among the smaller peoples such as Mro and Khyang. The Rajguru remained in Rangamati upto 1976 and the Buddhists of Chittagong Hill Tracts recall the venerable Agravamsa’s name with much gratitude. The learned Pali scholar and exponent of the Tripitaka who studied in Burma for more than ten years has left behind a rich legacy. (দ্রষ্টব্য: বিংশতিতম কঠিন চীবর দান স্বরণিকা ’৯৩। রাজবন বিহার, রাজবন, রাঙ্গামাটি পৃ: ৪৬, ৪৭) রাজা দেবাশীষ রায় মহোদয়ের এই বক্তব্যে রাজগুরু শ্রীমৎ অংগ্রবংশ মহাস্থবিরের অবদানের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি এবং তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়ছে।

চাকমা সমাজে স্বদ্ধর্মের পূনর্জাগরণের মূলে শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবিরের মহান অবদানের জন্য চাকমাগণ তাঁর কাছে ঋণী একথা অকপটে স্বীকার করা হয়ে থাকে। লক্ষণীয়; – সত্যকথা বলতে হলে ২০/২৫ বৎসর পূর্বে চাকমা সমাজে কঠিন চীবর দানের নানা বিধি বিধান জানা ছিলনা। অন্যান্য ধর্মাচরণ বিধিও খুব যে জানা ছিল তাও নয়। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবির (তখন স্থবির) বার্মায় শিক্ষা সমাপন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তখনকার চাকমা প্রধান স্বনামধন্য মেজর ত্রিদিব রায় সঙ্গে সঙ্গে তখন তাঁকে রাজগুরু পদে বরণ করে নেন। ইহা সর্বজন স্বীকৃত সত্য যে, সর্ব প্রথম তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই চাকমা সমাজে ধর্মের জাগরণ আসে। শীল পালন, উপসথ গ্রহণ, চীবর দান, সংঘদান ইত্যাদি বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই প্রথম পাঠ নিই। তখনকার দিনে অবশ্য পূর্বে বর্ণিত তৃতীয় প্রণালী মতে পূর্বে প্রস্তুত চীবর দিয়েই কঠিন চীবর দান করা হত। কিন্তু সেই যুগে তাও কম ছিলনা। আর এভাবে তাঁর কাছে হাতেখড়ি না নিলে পরবর্তীকালে বনভান্তের মত মহাসাধকে বুঝার মত, গ্রহণ করার মত আমাদের সামর্থ হতনা। এযেন অনেকটা মহাসাধক মুক্ত পুরুষ বনভান্তের কল্যানময় আবির্ভাবের জন্যই আগে ভাগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখা। (দ্রষ্টব্য: “বুদ্ধ প্রশংসিত কঠিন চীবর দান ও আধুনিক বৌদ্ধ সমাজ, শ্রী বঙ্কিম কৃষ্ণ দেওয়ান, প্রাক্তন সম্পাদক, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি; বৃহতের সন্ধানে। শ্রীলঙ্কা সরকার কর্তৃক উপহার প্রদত্ত বোধি বৃক্ষ চারা রোপণ ও শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ সাধনানন্দ ভিক্ষু (বনভান্তে) মহাস্থবির বরণোৎসব ’৮১ স্বরণিকা”) প্রবন্ধে লেখক বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ডি.সি. অফিসের হেডক্লার্ক ছিলেন। তিনি চাকমা উত্তরাধিকার আইন ও চাকমা প্রবাদবাক্য গ্রন্থের রচয়িতা এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক।
কালিন্দী রাণীর আমলে তঞ্চঙ্গ্যাগণ ব্রিটিশদের কুকি দমন অভিযানে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিল। রাইংখ্যং কুতুবদিয়া অধিবাসী (তৎকালীন সুবলং বরকলের বাসিন্দা) শুভধন তঞ্চঙ্গ্যা, কুণ্ড মহাজন, হিচাধন আমু বিভিন্নভাবে ব্রিটিশদের সহায়তা করেছিলেন বলে জানা যায়।

পাকিস্তান আমলেই তঞ্চঙ্গ্যাদের শিক্ষা দীক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়নে যাত্রা শুরু হয়। চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হলে এতদ এলাকার তঞ্চঙ্গ্যাগণ অনেকেই চাকুরী এবং বাঁশ সরবরাহের ঠিকাদারী গ্রহণ করে। এই প্রথম বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে তাদের ব্যাপক যোগাযোগ ঘটে। কাপ্তাইতে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ১৯৬০ সালে সম্পন্ন হয়। জমিজমা, ঘরবাড়ী জলমগ্ন হলে রাইংখ্যং অঞ্চলের বহু তঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবান, রেজা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, নোয়াপতং এলাকায় চলে যায়। ঐ প্রকল্পের অধীনে শ্রী ঈশ্বর চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (তিনি তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে সর্ব প্রথম বি.এ. ডিগ্রিধারী) কানুনগো হিসেবে এবং শ্রী বীরকুমার তঞ্চঙ্গ্যা এসিস্ট্যান্ট ওয়েলফেয়ার অফিসার হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। পূর্বে জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে শ্রী যোগেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা ও শ্রী রবিকুমার তঞ্চঙ্গ্যা এম.এল.এস.এস. চাকুরীতে নিযুক্ত ছিলেন।
তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সুযোগ্য সন্তান শ্রী যতীন্দ্র প্রসাদ তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৬৬ সালে এল. এল. বি. ডিগ্রী অর্জন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অপর কেউ তৎপূর্বে ঐ ডিগ্রী লাভ করেছিলেন বলে জানা যায় না যদিও তৎকিয়ৎ পরবর্তীকালে চাকমা ও মারমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এল. এল. বি. ও এল. এল. এম. ডিগ্রী অর্জন করেছেন। শ্রী যতীন্দ্র প্রসাদ তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৬৯ সালে ই. পি. সি. এস. পাশ করে ১৯৭০ সালে ডেপুটি ম্যজিষ্টেট পদ লাভ করেন এবং ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক পদে ২রা জুলাই যোগদান করেন।
ষাট ও সত্তরের দশকের দিকে তঞ্চঙ্গ্যাদের অনেকেই সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে কয়জন তারা হলেন – শ্রী যোগেশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (আমিন); তিনি পরে রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ হন। তদানীন্তন জেলা প্রশাসক জনাব শফিকুল ইসলাম মহোদয় (পরবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার) এই একাডেমী স্থাপন করে দেন। ১৯৮১ ইং ১লা জানুয়ারী বঙ্গভবনে যুব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সেরা শিল্পী (চারু) হিসেবে সম্বর্ধিত হন। অন্যান্যদের মধ্যে শ্রী চিত্র কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড), শ্রী নতুন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রজনী কান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (ব্লক সুপারভাইজার), শ্রী অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও শ্রী মতি শাসনা তঞ্চঙ্গ্যা (অফিস সহকারী, জেলা প্রশাসক অফিস) এবং শ্রী নবকুমার তঞ্চঙ্গ্যা (এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পরবর্তীতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী), শ্রী সুভাষ তঞ্চঙ্গ্যা (ফার্মাসিস্ট), শ্রী মনোজ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী মোহন লাল তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রবি মোহন তঞ্চঙ্গ্যা (রাঙ্গামাটি পৌরসভা), শ্রী হীরাবালা তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী রাবন তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী বাল্মীকি তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী নেত্র (লত্র) তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রীমতী পুষ্প তাকুকদার (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী ভুবন মোহন তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী অতুল তঞ্চঙ্গ্যা (ফরেস্টার), শ্রী যোগেশচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (ফার্মাসিস্ট) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে বহু তঞ্চঙ্গ্যা পুরুষ মহিলা সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন বা করেছেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি তঞ্চঙ্গ্যা ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন সত্তরের দশক হতে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। প্রকৌশল, চিকিৎসা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তঞ্চঙ্গ্যাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের মার্চ এপ্রিল মাসে যখন পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্যাতন আরম্ভ হয় তখন চট্টগ্রাম জেলার লোক, দলে দলে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় গ্রহণের জন্য ধাবিত হয়। রাজবিলা, নোয়াপতং, তাছারা (বান্দরবান), রাজস্থলী, রাইংখ্যং এর দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ও দুর্ভেদ্য জংগল অতিক্রমকালে তাদেরকে ঐ এলাকার তঞ্চঙ্গ্যাগণ আহার পানীয় দিয়ে সহায়তা করে এবং নিরাপদ পথে সীমান্ত পাড় করে দেয়। রাজস্থলীর ভাইস চেয়ারম্যান জ্ঞান বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, নূতন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), মুনু তঞ্চঙ্গ্যা, আরো অনেকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সহায়তা করেন। ঐসব এলাকাতে এবং হোয়াগ্গা, বারঘোনিয়া অঞ্চলে পাঠান পাঞ্জাবীদের হাত থেকে বাঁচাতে বহু বাঙ্গালী পরিবারকে আশ্রয় প্রদান করা হয়। হোয়াগ্গার অধিবাসী বর্তমানে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী অনিল তঞ্চঙ্গ্যা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বান্দরবানের বালাঘাটা নিবাসী উদয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা ও লাল মোহন তঞ্চঙ্গ্যা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বান্দরবানে অদ্যাবধি তাঁদের নাম বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।
তঞ্চঙ্গ্যাদের রাজনৈতিকভাবে পৃথক জাতিসত্ত্বা হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পর স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ সালের ১৯ নং আইন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ সালের ২১ নং আইন পাশ ও বলবতের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রতিনিধিত্ত্বের জন্য যথাক্রমে দুইটি ও একটি পৃথক পৃথক আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তঞ্চঙ্গ্যাদের উল্লেখযোগ্য বসতি না থাকায় ঐ জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য পৃথক আসন সংরক্ষণ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালের ২৫শে জুন প্রথম স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান বিশিষ্ট সমাজকর্মী শ্রী পরিমল তালুকদার এবং ১২২ নং কুতুবদিয়া মৌজার স্বনামধন্য মেঘনাদ কার্বারীর সুযোগ্য পুত্র শ্রী রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা (বাবুল) রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে ১৩১ নং বল্লালছড়া মৌজার প্রাক্তন হেডম্যান শ্রী সাতকমল আমু বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্রী প্রসন্নকান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (দুর্জয়) সদস্য পদে নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রবর্তনে সরকারের সহায়তা করে শ্রী পরিমল তালুকদার উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তঞ্চঙ্গ্যাগণ স্বীকৃতি লাভ করে এবং প্রশাসন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার সুযোগ লাভ করেছে।
=======================
লেখাটির পুরো রেফারেন্স ও কৃতিত্ব
[তঞ্চঙ্গ্যা বীর কুমার: তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি]
তঞ্চঙ্গ্যা মহা সম্মেলন ১৯৯৫ ইং
[বিঃদ্রঃ পেইজের নিয়মানুযায়ী *উপজাতি শব্দের বদলে *আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, এডমিন বিভাগ মনে করে আমরা আদিবাসী উপজাতি নয়]

Shri Dr. Kartrik Chandra Tanchangya

কবিরত্ন ডাঃ কার্ত্তিক চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা

Shri Dr. Kartrik Chandra Tanchangya was known as poet and physician. His fame spread outside Chittagong Hill Tracts.  Kartik Chandra Tanchangya was born in March 1920 in Kutubdia village in the Basin  of Rainkyong River, Bilaichhari upazila. His wife named was Latika Tanchangya, known as Sadhuma.

Books

He penned many books in Bengali and Tanchangya language, namely:

Discourse on Buddha’s Enlightenment (1984)

Verses of Salutation to the Buddha (written in Tanchangya Language)

Story of King Udayana (1961)

Garland of Buddha’s Stories

Episode of Buddha’s Renunciation

Life of King Asoka(1983)

Bijayagiri

Man’s Divinity (on the story of Buddha’s past lives)

Anagatvamsa- a notable unpublished  book

Among them, Men’s Divinity has regularly published up to four editions under Chaloin Magazine during the editorship of Milinda Tanchangya. Moreover, Bijoygiri Play has published the complete play from fifth Edition of Chaloin onward under the editorship of Karmadhan Tanchangya. Apart from this, his extraordinary stories, poems, essays were published in magazines such as Nairanjana Magazine, Sambodhi, Parbatya Bani, Jhorna, weekly papers etc.

He was a contemporary poet and writer with Shri Birajmohan Dewan (author of Chakma Jati Itibrita), Shri Probat Kumar Dewan (editor of Goirika). But senior to writer Shri Biro Kumar Tanchangya and Shri Rati Kanta Tanchangya.

Populous work and Award

Among his writing, there is a romantic poem named “Radhman Dhanpati Play” written by Sri Kartik Chandra Tanchangya published at Pohr Jangal (page 44-60). At that time the Dean of Bengali Department at the University of Chittagong described him as Gem of Poet (কবিরত্ন) in the Chittagong Hill Tracts.

Passing away

Poet and writer Shri Kartrik Chandra Tanchangya passed away in 1997 at the age of 77.

References:

1. Pohr Jangal, Editor Karmadhan Tanchangya

2. Tanchangya Jati, by  Rati Kanta Tanchangya